নিজস্ব প্রতিবেদক
সংবিধান সংস্কারে ৬২ প্রস্তাব বিএনপির
সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে ৬২টি প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, গণভোট, সংসদের উচ্চকক্ষ, উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃজনের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। তবে বিএনপির মতে, সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন করবে নির্বাচিত সরকার।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনপ্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের হাতে বিএনপির প্রস্তাবনা জমা দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বেলা ১১টার পর তিনি কার্যালয়ে আসেন। প্রায় আধা ঘণ্টার মতো ছিল বিএনপির প্রতিনিধিদল। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে বিএনপির প্রস্তাবনার কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, সূচনা থেকে শুরু করে তফসিল পর্যন্ত ৬২টি জায়গায় বিভিন্ন প্রস্তাব, সংশোধনীর প্রস্তাব জমা দিয়েছি। কমিটি বিবেচনা করবেন বলে আমরা আশা করি।
প্রস্তাবনার মূল অংশে বাংলাদেশের রাজনীতির চরিত্র পরিবর্তনের বিধান ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ করেছিল সেগুলোসহ কিছু নতুন প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রস্তাবে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদের রক্তের অঙ্গীকার ও বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যাতে সংসদীয় একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি না হয়, সেগুলো মাথায় রেখে আমাদের প্রস্তাবনা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, পরপর দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন না হন, সে বিধান রেখেছি। নতুন করে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টির বিধানের প্রস্তাব করেছি।
বিচার বিভাগের বিষয়ে বিএনপি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান তিনি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ যাতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে থাকে। নতুন পদ হিসেবে উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রী পদ সৃজনের প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এটা আগে ছিল আমরা তা পুনঃপ্রবর্তনের বিধানের প্রস্তাব করেছি। যেসব বিষয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা বেশি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানুষের এক নম্বর আকাঙ্ক্ষা, সেটি আদালতের বিচারাধীন আছে, আশা করি মানুষের পক্ষে আসবে। গণভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাব করেছি। তিনি বলেন, আমরা প্রস্তাবনায় প্রজাতন্ত্র, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, তফসিলসহ সব বিষয়ে অ্যাড্রেস করেছি। যাতে সংবিধানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হয় এবং সেটার রূপকার জনগণ পায়। রাষ্ট্রের সব অঙ্গে যাতে সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি হয়, সেই প্রস্তাব দিয়েছি।
সংবিধান পুনর্লিখনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, এ বিষয়ে বিএনপি কোনো বক্তব্য দিয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাপক ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছি। যাতে এটা গণতান্ত্রিক সংবিধান সংশোধন হয় এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।
সংসদের অবর্তমানে সংবিধান সংশোধনীর অনুমোদন কীভাবে হবে- এমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবনাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশেষজ্ঞসহ সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত করবেন। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন রানা।
"