জবি প্রতিনিধি
সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর পরীক্ষা স্থগিত
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে সহপাঠীর মৃত্যুর অভিযোগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কবি নজরুল ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতাল ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী কলেজে চলমান অনার্স প্রথম বর্ষের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থান করায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। ৫টার পর তারা চলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর প্রায় ১৪টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে এ হামলা ভাঙচুর চালায়। ভুল চিকিৎসায় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) এইচএসসি শিক্ষার্থী অভিজিত হাওলাদারের মৃত্যুর জের ধরে এ হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, অভিজিত হাওলাদার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে
ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তির দুদিন পর ১৮ নভেম্বর মারা যান। অভিজিতের প্লাটিলেট কমে গেলে পরিবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে চায়। এতে বাধা দেয় ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মৃত্যুর পর টাকা দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ আটকে রাখে। গত বুধবার ডিএমআরসি কলেজের শিক্ষার্থীরা লাশ নিতে গেলে কোনো সমাধান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ওইদিন সন্ধ্যার পর পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়। পরদিন বৃহস্পতিবার ডিএমআরসির শিক্ষার্থীরা আবার ন্যাশনাল মেডিকেলে এলে সকালে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হন।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ‘সুপার সানডে’ ঘোষণা করে রাজধানীর প্রায় ১৪টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফটক অবরোধ করে গেট ভাঙচুর করে। আবদুর রউফ, বিজ্ঞান কলেজ, নটর ডেম, সিদ্ধেশ্বরী, ডিএমআরসি, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। এ সময় তারা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটক ভাঙচুর করেন।
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা দুপুর ২টা নাগাদ ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালের সামনে থাকা বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। এরপর পাল্টা ধাওয়া দেয় অন্যন্যা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ধাওয়া দিয়ে ওই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে নিয়ে যায়। এরপর দুই পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পাঁচ ছয়জনকে আহত অবস্থায় রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, আজ (গতকাল রবিবার) পরীক্ষা ছিল। গতকাল (গত শনিবার রাত) রাত পর্যন্ত কলেজের প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলল, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছে, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা বলল কিছু হবে না। দুপুর সোয়া একটায় কিছু বোঝার আগেই সিসিটিভিতে দেখি প্রচুর ছেলেমেয়ে এসেছে। গেট ভেঙে ঢুকেছে। ইচ্ছামতো ভাঙচুর করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। গ্যাস লাইন ছেড়ে দিয়েছে। এরা কি ছাত্র হতে পারে? এত নাশকতা তো ছাত্ররা করতে পারে না।
এদিকে পরম মমতায় একজন রোগীকে কোলে নিয়েছেন চিকিৎসক। এমনি একটি ভাস্কর্য ছিল পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটের সামনে। সেই ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। ভাঙচুরের ভাস্কর্যের মাথা হাতে নিয়ে তাদের উল্লাস করতেও দেখা গেছে। ভাস্কর্যের মুখে কালো কালি দিয়ে ক্রস চিহ্নও দিয়ে দেয়।
ভাস্কর্যের মাথা হাতে নিয়ে ছবি তোলা নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভাস্কর্যের মাথা হাতে নিয়ে ছবি তুলব। স্টুডেন্টদের মারছে। এটার প্রতিশোধ নিয়েছি। কবির হোসেন নামে এক সিকিউরিটি ইনচার্জ বলেন, ১৬ বছর ধরে চাকরি করি। এমন ঘটনা আগে দেখিনি। ভাস্কর্যটাও ভেঙে ফেলেছে। কী তাণ্ডবটাই না চালিয়েছে। হাসপাতাল ও কলেজের ভেতরে ঢুকে হামলা চালিয়েছে।
"