নিজস্ব প্রতিবেদক
সংস্কারের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সিইসি নাসির
নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এস এম মো. নাসির উদ্দীন বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। শপথ নিয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে গতকাল রবিবার তিনি এই কথা জানান। এ সময় ইসির সম্মেলন কক্ষে সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনার, কমিশন সচিবসহ কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগের দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নির্বাচন কমিশনারদের শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিব ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শপথ গ্রহণের জন্য দুপুর সোয়া ১২টার পর তারা সুপ্রিম কোর্টে আসেন। গত বৃহস্পতিবার এ এম এম মো. নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিশনের নাম ঘোষণা করা হয়।
ওই চার নির্বাচন কমিশনার হলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তহমিদা আহ্মদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। এ সময় তার সূচনা বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। সিইসি বলেন, মানুষ এখন ভোটের নাম শুনলে নাক সিটকায়। শপথে আমরা যে ওয়াদা করেছি সেই পথে আছি কি না, সেটা আপনারা ফলো করবেন। খারাপ কাজ আগে যেগুলো হয়েছে তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করব।
সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, জাতিকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া, এটাকেই আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।
সরকারের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করতে পারবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সরকার সেই সরকার নয়, যেই সরকার চাপ দেয়। আগের সরকার চাপ দিয়েছে কারণ তাদের দলীয় এজেন্ডা ছিল। অন্তর্বর্তী এই সরকারের কোনো দলীয় এজেন্ডা নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ নেই। ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তিনি মুক্তি পেতে চান। আমি বিশ্বাস করি, কোনো চাপ থাকবে না। আমাদের স্বাধীনতা দেওয়া আছে। নির্বাচন কবে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারব না। যেকোনো নির্বাচন করতে গেলে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ থাকে। কিছু এসেনসিয়াল সংস্কার তো করতেই হবে। উদাহরণস্বরূপ যেই তরুণ প্রজন্ম ভোটের অধিকারের জন্য এত ত্যাগ করল, তাদের ভোটাধিকারের সুযোগ দিতে হলে ভোটার করতে হবে। শুনতে পাই ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ও অনেক ভুয়া ভোটার আছে। সত্য-মিথ্যা আমি জানি না। আবার কেউ কেউ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হোক, আবার কেউ বলছে বিদ্যমান পদ্ধতি থাকুক। কেউ বলছে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হোক, কেউ বলছে বর্তমান পদ্ধতি বহাল থাকুক। যেটাই হোক না কেন, সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ধরনের জিনিসগুলোর ফয়সালা না হলে আমরা কীভাবে ভোট করব? তিনি বলেন, সরকার অনেক সংস্কার কমিশন করে দিয়েছে। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন থেকে যেসব সুপারিশ আসবে, সেখান থেকে সবার কাছে যেসব সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে সেগুলো আমরা নেব। ৩১ ডিসেম্বর সুপারিশ জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। ওইসব সুপারিশ পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বসবেন বলেছেন। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো গ্রহণ করা হবে। যেগুলোর বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো পরের সরকারের জন্য প্রস্তাব আকারে রেখে দেব।
আওয়ামী লীগ ও সমমান দল নিয়ে নির্বাচন হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেক দলের ভোটের অধিকার থাকবে। যেসব সংস্কার কমিশনগুলো নিশ্চই এসব বিষয়ে সুপারিশ দেবে। তাদের সুপারিশের পর তা বিবেচনা করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যেই সিদ্ধান্ত আসবে, সেটাই হবে। আর বড় দল আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিকদের নিয়ে সিরিয়াস বিতর্ক আছে। এসব বিতর্কের ফয়সালা আগে হোক।
প্রধান নির্বান কমিশনার এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, এই প্রথম খুবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আমাদের নিয়োগ হয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষা করে নিয়োগ হয়েছে। আদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না এই দায়িত্বটা আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। টিভিতে দেখে প্রথম জানতে পারি। জাতির একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কেউ কেউ এটাকে দ্বিতীয় বিপ্লবও বলে থাকেন। এই ক্রান্তিকালে এই গুরু দায়িত্বটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আমি টিম মেম্বারদের বিষয়ে যতটা জানতে পেরেছি তাতে একটি সলিড টিম নিয়ে কাজ করতে পারব। যে দায়িত্ব আমাদের ওপর পড়েছে তা পালনে ইনশাআল্লাহ সচেষ্ট থাকব। জাতির প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমরা নিজেদের নিয়োজিত রাখব। নিজের কর্ম জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সিইসি বলেন, আমার জীবনের ব্যর্থতা নেই। আমি কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। অনেক কঠিন কাজ করতে হয়েছে। ব্যর্থ হইনি। ইসির দৃশ্যমান যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে- এই বাইরে আরো বহুবিদ চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেটা আমরাও জানি না। নিত্যনতুন অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্র আন্দোলনে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে পুরো কমিশন পঙ্গু হাসপাতালে যান।
"