প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

৩০ বছরে ডায়াবেটিক রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ

বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, ১৯৯৪-৯৫ সালে বিশ্বে যতসংখ্যক ডায়াবেটিক রোগী ছিলেন, ৩০ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে সেই সংখ্যাটি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে এসব তথ্য।

প্রবন্ধে আরো বলা হয়, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে যত প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিক রোগী ছিলেন, শতকরা হিসাবে তাদের ১৪ শতাংশের শারীরিক অবস্থা গুরুতর ছিল। অথচ ১৯৯০ সালে ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থদের শতকরা হার ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। বস্তুত বিশ্বে এর আগে এত অল্পসময়ের মধ্যে ডায়াবেটিসের এমন বিস্তার দেখা যায়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ৮০ কোটির বেশি। ১৯৯০ সালে এ সংখ্যা ছিল ২০ কোটির কম।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে দুই ধরনের ডায়াবেটিসের উল্লেখ রয়েছে। প্রথমটির নাম টাইপ-১ ডায়াবেটিস। শিশু ও তরুণ বয়সিরা এ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এটির চিকিৎসা অপেক্ষাকৃত কঠিন। কারণ এ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে মূলত তারাই আক্রান্ত হন, যারা দেহের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম। এটি একটি জন্মগত ত্রুটি। ডায়াবেটিসের দ্বিতীয় ধরনটির নাম টাইপ-২। সাধারণত মধ্যবয়সিরা এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বয়সের কারণে প্রয়োজনীয় ইনসুলিনের নিঃসরণ কমে যাওয়াই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধটির লেখকরা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডায়াবেটিস রোগের বিস্তার সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান যাচাই করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, জাপান, কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্কসহ বেশিরভাগ উন্নত দেশে গত ৩০ বছরে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা হয় স্থিতিশীল রয়েছে, নয়তো হ্রাস পেয়েছে।

অন্যদিকে একই সময়সীমায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় রোগটিতে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হারে। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, পাকিস্তানের নারীদের এক-তৃতীয়াংশই বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ১৯৯০ এবং পরবর্তী বছরগুলোয় এ হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। গবেষকরা বলেছেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের বিস্তারের জন্য প্রধানত দায়ী অস্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ততা এবং শারীরিক পরিশ্রম বা শরীর চর্চার অভাবে সৃষ্ট স্থূলতা। এছাড়া এ ক্যাটাগরিভুক্ত দেশগুলোয় ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পরিষেবাও উন্নত নয়। বর্তমানে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। ২০২২ সালের এক পরিসংখ্যানকে আমলে নিয়ে গবেষকরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি ৫ জন ত্রিশোর্ধ্ব টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে তিনজনই চিকিৎসাবঞ্চিত। গবেষকদের মতে, বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাবঞ্চিত ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৪ কোটি ৫০ লাখ।

ভারতের মোট ডায়াবেটিক রোগীর এক-তৃতীয়াংশ চিকিৎসাবঞ্চিত। আফ্রিকার সাব সাহারান অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর ডায়াবেটিক রোগীদের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ চিকিৎসাসেবা পান। লন্ডনের বিখ্যাত ইম্পেরিয়াল কলেজের কয়েকজন বিজ্ঞানী গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। গবেষকদল ও প্রবন্ধের প্রথম লেখক মাজিদ এজাতি বলেন, ‘নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে- এটা উদ্বেগজন। তবে আরো বেশি উদ্বেগজনক হলো যথাযথ চিকিৎসাসেবার অভাব। কারণ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যথাযথ চিকৎসাসেবা না পেলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হন এবং একসময় এসব জটিলতা অঙ্গছেদন, হৃদরোগ, কিডনি বিকল এবং অন্ধত্বের মতো গুরুতর শারীরিক বিপর্যয় বয়ে আনে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close