গাজী শাহনেওয়াজ, আজারবাইজান থেকে
আজারবাইজানে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নতুন বৈশ্বিক কাঠামো প্রয়োজন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং পৃথিবী ও মানব কল্যাণকর নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে প্রয়োজন এক নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো। গতকাল বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এলডিসি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই রূদ্ধদ্বার বৈঠকে পাঁচটি প্রধান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ নেপাল, মালাউই, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া এবং বাংলাদেশের নেতারা যোগ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার, যা পৃথিবী এবং মানুষের জন্য হতে হবে কল্যাণকর’। একইসঙ্গে বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিতা সম্মেলন ‘সামিট ফর দ্য ফিউচার’ এর প্রতিও সমর্থন জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছি, যার মূল হচ্ছে ভোগ, ভোগ এবং ভোগ। এটি শুধু বর্জ্য, বর্জ্য এবং বর্জ্য তৈরি করে। আমাদেরকে শূন্য বর্জ্যরে বিশ্ব তৈরি করতে হবে।’ প্রতি বছর কপ জলবায়ু সম্মেলন করা উচিত নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের কী প্রয়োজন, তা আমরা জানি এবং এর জন্য আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত। এটি দেশ অনুযায়ী হওয়া উচিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি (বর্জ্য) নিরসনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি বছর এখানে দেখা করার দরকার নেই। প্রতি বছর আলোচনার জন্য মিটিং করা সময়সাপেক্ষ, অপচয় এবং অপমানজনক’ ।
প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু আলোচনার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান পদ্ধতিটি বিশ্বের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বন্যা রোধে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পানি ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘পানি আমাদের প্রধান পরিবেশগত সমস্যা। আমাদের এমনভাবে পানি ব্যবস্থাপনা করতে হবে- যাতে তা প্রকৃতিকে সমর্থন করে। প্রধান উপদেষ্টা গতকাল বুধবার নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত জলবিদ্যুতের জন্য একটি দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটানকে দক্ষিণ এশিয়ার গ্রিড তৈরি করার কথা ভাবতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ সহজেই নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনতে পারে। কারণ এটি বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে। নেপালের জলবিদ্যুৎ সহজলভ্যও হবে।’ তিনি কপ-২৯-এর মূল বিষয় এবং কার্বন ক্রেডিট নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানের বিষয়েও কথা বলেছেন। তিনি তার তিন শূন্যের স্বপ্নকে সম্মেলনে সবার সম্মুখে উপস্থাপন করে বলেন, ‘প্রতিটি যুবক তিন শূন্য ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে- শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদের ঘনত্ব, শুধু সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে এবং নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব। প্রতিটি ব্যক্তি তিন শূন্য ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং সারা জীবন তিন শূন্য ব্যক্তি হিসেবে থাকবে।
বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বড় অবিচারের সম্মুখীন হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের বলতে চাই যে আমরা আপনাদের বিষয়ে গুরুত্ব দেই। জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য একটি বৃহত্তর তহবিল সুরক্ষিত করার জন্য এলডিসিগুলো কঠোর আলোচনা এবং ‘গুরুতর প্রক্রিয়া’ তৈরি করতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বিশ্বনেতাদের বলেন, নিশ্চিতভাবে বিশ্বরেকর্ডে এটি সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হবে। তবে গুতেরেস আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ক্লিন এনার্জির বিপ্লব এখানেই। কোনো গোষ্ঠী, কোনো ব্যবসা, কোনো সরকার এটা বন্ধ করতে পারবে না।’ জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ট্রাম্প যখন ২০১৬ সালে প্রথম নির্বাচিত হন, তখন বিশ্বে ১৮০ গিগাওয়াট ক্লিন এনার্জি এবং ৭০০,০০০ বৈদ্যুতিক যানবাহন ছিল, যা বর্তমানে বেড়ে গিয়ে ৬০০ গিগাওয়াট ক্লিন এনার্জি এবং ১৪ মিলিয়ন বৈদ্যুতিক যানবাহনে এসে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রগুলো বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার প্রায় বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে আলোচনা করছে।
গুতেরেস বলেন, এ অর্থ দাতব্য নয়, ‘এটি একটি বিনিয়োগ। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাকু থেকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়।’
"