কূটনৈতিক প্রতিবেদক
কপ-২৯ সম্মেলন
নেই কোনো দৃশ্যমান অর্জন
আজারবাইজানের বাকুতে চলমান জাতিসংঘের বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে এবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দূষণকারী দেশগুলোর অনেকেই কোনো প্রতিনিধি পাঠাননি। গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ সম্মেলনে শক্তিশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিদেরও অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। কপ-২৯-এর বৈঠক শুরু হলেও তাতে ১৩টি বৃহত্তম কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনকারী দেশের শীর্ষনেতারা থাকবেন না। বিশ্বের বৃহত্তম দূষণকারী এবং শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের কোনো প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে না।
এদেশগুলো চারটি সর্বাধিক জনবহুল দেশ, যেখানে বিশ্বের প্রায় ৪২ শতাংশেরও বেশি মানুষ বসবাস করছেন। আগামী সপ্তাহে শক্তিশালী দেশগুলোর নেতাদের জি-২০-এর বৈঠক হবে ব্রাজিল। এ কারণে তাদের উপস্থিতি কম বলে জানা গেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্বাচন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ব্যক্তিগত অসুস্থতাও জলবায়ু সম্মেলন গুরুত্বপূণ হলেও অনেকে কম ইচ্ছা পোষণ করছেন। অতীত জলবায়ু সম্মেলনে প্রায়ই ফুটবল তারকাসহ বিভিন্ন দেশের অনেক বড় গায়ক-গায়িকাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যেত। তবে এবারের কপে দেখা মেলেনি তাদের।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আজারবাইজানে জাতিসংঘের কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত নতুন তথ্য ইঙ্গিত দেয়, ২০২৪ সালে জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ কয়লা, তেল এবং গ্যাস থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারক নির্গমন যে বছর প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল অর্থাৎ ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ বেশি হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। অথচ কপে বলা হচ্ছে, নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৩ শতাংশ হ্রাস পাবে। বিশ্বের দেশগুলো ২০২৩ সালে দুবাইয়ে কপ-২৮-এ জীবাশ্ম জ্বালানিকে ত্যাগ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে সম্মত হয়েছিল। এ সিদ্ধান্তকে একটি যুগান্তকারী হিসেবে স্বাগত জানানো হয়েছিল। কারণ পূর্ববর্তী ২৭টি শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যে কেউই বিশ্বব্যাপী উষ্ণতার প্রাথমিক কারণের ওপর বিধিনিষেধের আহ্বান জানায়নি।
তবে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে দূরে যাওয়ার কোনো চিহ্নের দেখা মিলছে না। বিশ্বের দেশগুলো এক বছর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ২০২৪ সাল বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের জন্য আরেকটি নতুন রেকর্ড স্থাপনের পথে হাঁটবে, যার কোনো প্রতিফলন এখনো দৃশ্যমান নয়। ১.৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখার এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের ওপর ‘ক্রমবর্ধমান নাটকীয়’ জলবায়ুর প্রভাব সীমিত করার সুযোগ বিশ্বের কাছে এখনো রয়েছে। সুইডেন লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলে ২০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে ৮১ শতাংশ নির্গমন কমানোর নতুন লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে পৌঁছানোর কথা রয়েছে ১০০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি সরবরাহে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু নিরাপত্তা ছাড়া কোনো জাতীয় বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সম্ভব নয়।’
এদিকে কপ-২৯-এর আয়োজক আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ আর্মেনিয়া, পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম, জলবায়ুকর্মী এবং তার দেশের সমৃদ্ধ তেল ও গ্যাসের ইতিহাস ও বাণিজ্যের সমালোচকদের নিন্দা করে বলেন, ‘আমরা সমন্বিত অপপ্রচারের শিকার।’ আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট বিশ্বনেতাদের নির্ধারিত দুটি দিনের বক্তব্য শুরু করেছেন এবং তাদের কথাকে ভণ্ডামি উল্লেখ করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ। তিনি আরো বলেন, আজারবাইজানকে পেট্রোস্টেট বলা ন্যায্য নয়, কারণ এটি বিশ্বের ১ শতাংশেরও কম তেল এবং গ্যাস উৎপাদন করে। তিনি তেল এবং গ্যাস, সূর্য, বায়ু এবং খনিজগুলোর মতোই ‘সৃষ্টিকর্তার উপহার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আলিয়েভ বলেন, তার দেশকে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে গিয়ে গ্রিন এবং ক্লিন এনার্জি ব্যবহারের জন্য কঠোরভাবে চাপ দেবেন।
"