নিজস্ব প্রতিবেদক
সেনাবাহিনী কতদিন মাঠে থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত সরকারের
মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রতিরোধের ব্যাপারে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দিষ্ট আদেশ রয়েছে, যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী যেন বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হতে না দেয়। তাছাড়া সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে সেনাবাহিনী কত দিন মোতায়েন থাকা প্রয়োজন। গতকাল বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস-এ-তে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান।
‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় মোতায়েন করা সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে সেনা কর্মকর্তা ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, প্রেস ব্রিফিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করা। এই মুহূর্তে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে, অন্তর্বর্তী সরকারই তা নির্ধারণ করবে। সেনাবাহিনী দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় নিয়োজিত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্যই সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর (৫ আগস্টের পর) দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা যেন ‘সুষ্ঠুভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে’ প্রয়োগ করা হয়, সে বিষয়ে সেনাবাহিনী সতর্ক আছে।
অপরাধের সংখ্যা অনেক কমেছে : কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, বর্তমানে দেশের ৬২ জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারকে সহায়তা করছে। সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পর অপরাধের সংখ্যা ‘অনেক কমেছে’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে যতটুকু আশা করা গেছে সে অনুযায়ী উন্নতি হয়নি। পুলিশ বাহিনী ধীরে ধীরে তাদের কার্যক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে। অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন : কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, জনগণের জানমাল, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে রক্ষা করার পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় কার্যক্ষম হতে সহায়তা করে আসছে সেনাবাহিনী। বিদেশি কূটনীতিক, দূতাবাস ও কারখানার নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার কাজটিও সেনাবাহিনী করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে নির্দিষ্ট আদেশ রয়েছে, সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতিতে তা প্রতিরোধে করবে। অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে, যেগুলো জনসম্মুখে আসে না।
সেনা সদস্যরা এক ব্যক্তিকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন এমন একটি ভিডিওর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পরিস্থিতির প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয়, তবে সেনাবাহিনী টার্গেট করে কাউকে মেরেছে এমন কোনো ঘটনা হয়নি। পুলিশের কাছে অপরাধের যেসব তথ্য থাকে সেগুলো নিয়েও সেনাবাহিনী কাজ করছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে ৬০০টির বেশি আনরেস্ট : কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান জানান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে এ পর্যন্ত ছয়শর বেশি আনরেস্ট হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেক ভায়োলেন্ট ছিল। অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা নিয়ে এগুলো যদি সময়মতো প্রতিরোধ বা শান্ত করার ব্যবস্থা না করা হতো তাহলে অনেক বেশি ঘটনা ঘটতে পারত। তিনি আরো জানান, গত দুই মাসে সাতশর বেশি বিভিন্ন ধরনের ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ নিয়ন্ত্রণ করেছে সেনাবাহিনী। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪১টি, সরকারি সংস্থা ও অফিস সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ৮৬টি, রাজনৈতিক দলের ঘটনা ছিল ৯৮টি।
মেজরের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার ঘটনাটি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ : আরেক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, গুলশানে একজন মেজরের সঙ্গে একজন পুলিশ কর্মকর্তার ঘটনাটি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ থেকে হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক ‘খুবই ভালো’।
৬ হাজারের বেশি অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২৫০০ : অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে জানিয়ে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, এ পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি অস্ত্র, ২ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয়েছে আড়াই হাজার ব্যক্তিকে। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৬০০টির বেশি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং কারখানাগুলো চালু করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করা হচ্ছে।
"