নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রামীণ ব্যাংক
সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গ্রামীণ টেলিকম ভবন দখলের অভিযোগে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রবিবার গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মঈনুদ্দিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে এ মামলা করেন। শুনানির পর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগকারীর বক্তব্য রেকর্ড করেন। একইসঙ্গে আদালত শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগ এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।
অপর আসামিরা হলেন- গ্রামীণ ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হারুন আর রশিদ, মো. তরিকুল ইসলাম, মো. গোলাম জাকারিয়া, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মামুনুর রশীদ ও কৃষ্ণ কান্ত রায়, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. প্রদীপ কুমার সাহা, গবেষণা ও উন্নয়ন সদস্য মো. রাজু মিয়া এবং মাসুদ আখতার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের পরামর্শক ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার ও টি এম জুবায়ের।
এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাইফুল মজিদের নেতৃত্বে আসামিরা গ্রামীণ টেলিকম ভবনের অফিস দখল করে। তাদের বিরুদ্ধে ভবনের আটটি অফিস কক্ষ ভাঙচুর ও সেখান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করার অভিযোগ রয়েছে। পরদিন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেখানে গেলে তাকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে তাদের বিরুদ্ধে শাহ আলী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে লিপিবদ্ধ করে।
এমন দুর্যোগ কখনো দেখিনি : গ্রামীণ টেলিকম ভবনে থাকা আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে নেওয়ার অভিযোগ তুলে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘আমরা বহু রকমের দুর্যোগের ভেতর দিয়ে যাই। এরকম দুর্যোগ আর দেখিনি কোনোদিন যে, হঠাৎ করে বাইরের থেকে কিছু লোক এসে বলল তোমরা সরে যাও।’ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস। এ ভবনে ড. ইউনূসের গড়া মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান আছে, যার প্রতিটির চেয়ারম্যান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘আমরা একটা ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। আমরা এ সুন্দর বিল্ডিংটা বানিয়েছিলাম অতি সম্প্রতি। আমরা যখন গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলাম, তখন আমাদের অফিস ওখানে ছিল। যখন আমাদের যাওয়ার পালা এলো, তখন আমরা ভাবলাম আমরা সবাই মিলে একটা বিল্ডিং করি যেখানে আমরা শান্তিতে কাজকর্ম করতে পারব। এটাই সেই জিনিস; আমাদের স্বপ্নের বীজতলা। এটা তার একটা নমুনা।’ তিনি বলেছিলেন, ‘হঠাৎ দেখলাম বাইরের লোক এসে এটা জবরদখল করে নিচ্ছে। আমরা বাইরের লোক হয়ে গেলাম তাদের কাছে। তারা এটা তাদের নিয়মে চালানোর চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারলাম না এটা কীভাবে হয়।’
ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি মন্তব্য করে এ নোবেলজয়ী আরো বলেন, ‘আমরা পুলিশকে বললাম যে এরকম কাণ্ড হচ্ছে। আপনারা এসে দেখেন। ঠিক করে দেন। পুলিশ প্রথমে (অভিযোগ) গ্রহণই করল না। তারপর একবার এসে ঘুরে গেল। কোনো অসুবিধা দেখল না। আমরা তাদের বললাম- দেখেন আমাদের দরজায় তালা দিয়ে যাচ্ছে তারা। সকাল বেলা এসে তালা খুলে দিচ্ছে। এখনো সেই পরিস্থিতি বিরাজমান।’
দেশের আইন-আদালত কোথায় গেল- এমন প্রশ্ন রেখে ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘আমরা সকাল থেকে শুনছি এখানে ঝাড়ু নিয়ে মিছিল হচ্ছে। কেন হচ্ছে, তা-ও বুঝছি না। আমরা ঝাড়ুর যোগ্য হয়ে গেলাম হঠাৎ করে। আমরা তো নিজের বাড়িতেই আছি। নিজের ঘরে আছি। আর কারো ঝামেলার মধ্যে তো আমরা যাই না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের যত প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলেছি তার প্রধান কার্যালয় এখানে। আমার পেছনে আমার পাশে যারা দাঁড়িয়ে আছে সারা জীবন ধরে তারা কাজ করে গেছে এগুলোকে সফল করার জন্য। দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য।’
এ ভবনে থাকা প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসার মুনাফার টাকায় গড়ে উঠেছে মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, এখানে হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এর প্রতিকারে আদালতের দ্বারস্থ হবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আর কোথায় যাব? সংবাদ সম্মেলনে যে আটটি প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয় সেগুলো হলো- গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ মৎস্য ও পশু সম্পদ ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ সামগ্রী, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ শক্তি ও গ্রামীণ কমিউনিকেশন। সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মঈনুদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
"