তুহিন আহমদ, সিলেট
ক্ষোভ থেকেই ফুটফুটে শিশু মুনতাহাকে হত্যা
* নিখোঁজের ৭ দিন পর মরদেহ উদ্ধার * গৃহশিক্ষক ও তার মাসহ আটক ৪
ক্ষোভ থেকেই হত্যা করা হয় শিশু মুনতাহাকে। নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর গতকাল রবিবার ভোরে পুকুর থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মুনতাহার প্রতিবেশী কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের মার্জিয়া আক্তার, তার মা আলিফজান বেগম, প্রতিবেশী নাজমা বেগম ও ইসলাম উদ্দিন আটক করেছে পুলিশ। আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হলেও তাদের নাম-পরিচয় জানানো হয়নি।
রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার কানাইঘাট (সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ৫ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন। ফুটফুটে হাস্যোজ্জ্বল মেয়েটি পুরো পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। বাবার সঙ্গে শেষ ঘুরতে বেরিয়েছিল স্থানীয় একটি জলসায়। বাড়ি ফিরে পরদিন বাড়ির আঙিনায় খেলছিল অন্য শিশুদের সঙ্গে। তবে ওইদিন বিকেল থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয় সে। চারদিকে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। শুরু হয় তদন্ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার নিখোঁজের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। অনেক প্রবাসী তাকে খুঁজে পেলে উপহারের ঘোষণা দেন। দিন যত গড়াতে থাকে, তাকে ফিরে পাওয়ার আশায় সবাই মুখিয়ে থাকেন। তবে নিখোঁজের সাত দিন পর সে ফিরেছে, তবে প্রাণচঞ্চল হয়ে নয়, নিথর দেহে ফিরেছে সে।
রবিবার ভোরে নিজ বাড়ির পাশের পুকুর থেকে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মুনতাহা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল গ্রামের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। তাকে জীবিত না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ জানায়, বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার গলায় রশি পেঁচানো ছিল। কানাইঘাট থানার ওসি মো. আবদুল আওয়াল বলেন, রবিবার ভোরে তার মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। মরদেহ দেখে বোঝা যাচ্ছে তাকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
যেভাবে পাওয়া যায় মুনতাহাকে : রবিবার ভোর। ওই সময় ৫ বছরের শিশু মুনতাহার লাশ খালের কাদামাটি থেকে তোলেন তার গৃহশিক্ষিকার মা। স্থানীয়রা কাদামাটি মাখা মুনতাহার লাশ দেখতে পান। এরপর তার গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়ার মাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিকা, তার মা ও নানি তিনজন মিলেই হত্যা করেছেন ৫ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে। হত্যার পর মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেন তারা। এ ঘটনায় শিশু মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়া, তার মা আলিফজান বিবি ও নানি কুতুবজান বিবিকে আটক করেছে পুলিশ।
কানাইঘাট থানার ওসি আবদুল আওয়াল বলেন, গত ৩ নভেম্বর মুনতাহাকে অপহরণ করা হয়। ওইদিনই তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর মরদেহ ঘরের পাশের একটি খালে কাদামাটিতে চাপা দিয়ে রাখা হয়। রবিবার ভোরে আলিফজান বেগম মরদেহ সরানোর চেষ্টাকালে স্থানীয়রা দেখে ফেলেন। এ সময় স্থানীয় থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় মর্জিয়া, তার মা ও নানিকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে আলিফজান ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। তিনি বলেন, শনিবার রাত ১২টায় মর্জিয়াকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কোনো তথ্য উদ্ঘাটন করা যায়নি, বরং সহজভাবে হেসে হেসে উত্তর দেয়। এরপর ভোররাতে লাশ উদ্ধারের পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ক্ষোভ থেকেই হত্যা করা হয় শিশু মুনতাহাকে : শিশু মুনতাহা নিখোঁজ- এমন খবরে এক দিন আগেও সরব ছিল নেটদুনিয়া। মুনতাহার সন্ধান চাই- এমন শিরোনামে দেশের হাজারো মানুষ নিজের ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজে পোস্ট দেন। সবার একটাই আকুতি ছিল জীবিত হয়ে মা-বাবার কোলে ফিরবে মুনতাহা। মুনতাহা ফিরেছে, তবে জীবিত নয়, মৃত অবস্থায়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি ও চুরির অপবাদ দেওয়ার ক্ষোভ থেকে সিলেটের কানাইঘাটের ৫ বছরের শিশু মুনতাহাকে হত্যা করেছে তার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়া। মার্জিয়ার স্বীকারোক্তির বরাতে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় আর কোনো কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
"