নিজস্ব প্রতিবেদক
জিরো পয়েন্টে সবাই ছিল আসেনি আওয়ামী লীগ
কর্মসূচি ঘোষণা করলেও রাজধানীর পল্টন জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে দেখা মেলেনি আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর। গতকাল সকাল থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ ছাত্র-জনতা সেখানে অবস্থান করেছেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘিরে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা দিনভর অবস্থান করে। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আওয়ামী লীগের সমর্থক সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ গত শুক্রবার নিজেদের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেয়, রবিবার (গতকাল) বিকেল ৩টায় শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ করবেন তারা। তারপর ওই পেজে টানা প্রচার চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত দুদিন আলোচনার মূল কেন্দ্রে ছিল আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি। শনিবার রাতে ফেসবুকে ছড়ানো হয়, বিভিন্ন জেলা থেকে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকামুখী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের এমন ঘোষণার পর পাল্টা কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা গতকাল রবিবার দুপুর ১২টা থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এতে তৈরি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। জনমনেও ভীতি তৈরি হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণা অনুযায়ী, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে তৈরি করা হয় অস্থায়ী মঞ্চ। মঞ্চের সামনে দুপুর ১২টা নাগাদ উপস্থিত হন কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতা দখলে নেন পুরো জিরো পয়েন্ট এলাকা।
এদিকে, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে সকাল থেকে নূর হোসেন চত্বর ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি চলছে। বিক্ষোভকারীরা নিজেদের শাহবাগ থানা যুবদল ও পল্টন থানা যুবদল বলে পরিচয় দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। এ ছাড়া গুলিস্তান এলাকায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। এর বাইরে গত রাত থেকেই রাজধানীর অলিগলিতে শক্ত অবস্থান নিয়ে ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাত থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মহড়া দেয় দলটি। তারা ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘গুম-খুনের অপরাধে খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’ স্লোগান দেন। আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দেখা গেছে।
তবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তাদের দেখা মেলেনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতাকর্মীকে গুলিস্তান এলাকায় আসতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে ৯ জন পুরুষকর্মী গণপিটুনির শিকার হন। তিনজন ছিলেন নারীকর্মী। মারধরের পর তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ জনগণকে শান্ত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সন্দেহভাজনদের পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
নূর হোসেন চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন : শহীদ নূর হোসেন দিবসে রাজধানীর গুলিস্তানে নূর হোসেন চত্বরে বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। গতকাল রবিবার ভোর থেকে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় নূর হোসেন চত্বরে দেখা যায়, সেখানে বেশ কিছু উৎসুক জনতা জড়ো হয়েছেন। যান চলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম। নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় গণতন্ত্র মঞ্চ। পল্টন থানা যুবদলের পরিচয় দিয়ে আরেকটি দল সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মিছিল নিয়ে নূর হোসেন চত্বরে যায়।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার শাহরিয়ার আলী বলেন, নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নূর হোসেন চত্বরে যেসব সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্র ফোরাম, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাতীয় গণফ্রন্ট, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ও জাতীয় গণফ্রন্ট। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৭ সালে যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন বুক ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে রাজপথে মিছিলে নেমেছিলেন। সেদিন পুলিশের গুলিতে তিনি মারা যান।
"