সাদমান সময়, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

  ০৮ নভেম্বর, ২০২৪

বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা হ্যাকারদের পকেটে

সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় প্রকৃত উপকারভোগীদের বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা যাচ্ছে হ্যাকারদের পকেটে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বয়স্ক, বিধাব ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে জমা হয়েছে। তবে ভাতাভোগীদের মোবাইলে সংক্ষিপ্ত একটি নাম্বার থেকে কল দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছে হ্যাকাররা। এমনটাই অভিযোগ করেছেন মিরসরাইয়ের ভাতাভোগীরা। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে বয়স্ক ভাতা ১৩ হাজার ৬২৫ জন, বিধবা ভাতা ৪ হাজার ৭০০ জন ও প্রতিবন্ধী ভাতা পায় ৬ হাজার ৯৮৮ জন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বয়স্ক ভাতা ৬০০ টাকা করে ১৮০০ টাকা, বিধবা ভাতা ৫৫০ টাকা করে ৩ মাসের ১৬৫০ টাকা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ৮৫০ টাকা করে ৩ মাসের ২ হাজার ৫৫০ টাকা একসঙ্গে পাবেন। গত অক্টোবরের শেষদিকে ও নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার টাকা ভাতাভোগীর মোবাইল নাম্বারে নগদের মাধ্যমে জমা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রতিবন্ধী ভাতা জমা হবে।

বয়স্ক ভাতাভোগী উপজেলার পূর্ব দুর্গাপুর গ্রামে কথা হয় হোরা মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে আমার মোবাইলে সংক্ষিপ্ত একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে আমার নাম জানতে চাওয়া হয়। আমি নাম বলার পর ওই ব্যক্তি বলেন, তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে বলছেন। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর নতুন করে ভাতার কার্ড করা হচ্ছে। আমি যেন জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি ও ভাতা বই নিয়ে অফিসে যোগাযোগ করি। পরবর্তী সময়ে আমার নাম্বারে একটি কোড নাম্বার আসলে তিনি পুনরায় কল দিয়ে সেটি দিতে বলেন। আমি কোড নাম্বারটি দিই। পরদিন ভাতার টাকা তুলতে গেলে দেখি আমার নাম্বারে ভাতার ১৮০০ টাকা নেই।

একই গ্রামের নুরুল ইসলাম প্রকাশ সুজা মাস্টার, হেলু সওদাগরসহ অনেকের টাকা নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। গরিব-অসহায় ও বয়স্কদের টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত প্রতারকদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

এই বিষয়ে উপজেলা সহকারী সমাজসেবা অফিসার সাহাব উদ্দিন বলেন, ভাতার টাকা জমা হওয়ার পর হ্যাকাররা ভাতাভোগীদের নম্বরে ফোন দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও বই উপজেলায় আনার কথা বলে ওটিপি কোড পাঠাচ্ছে বলে কয়েকজন থেকে অভিযোগ পেয়েছি। পরবর্তী গ্রাহক থেকে কোড নিয়ে নাম্বার হ্যাক করে ভাতার টাকা তুলে নেয় একটি প্রতারকচক্র। গত কয়েকদিনে প্রতিদিন ৮-১০ জন করে ভাতাভোগী টাকা খুইয়ে নেওয়ার অভিযোগ দিয়েছেন। কেওয়াইসি পদ্ধতিতে গ্রাহকরা যদি পিন নাম্বার পরিবর্তন করে নেন এবং কাউকে পিন নাম্বার না বলেন তাহলে হ্যাকাররা আর সুযোগ পাবে না বলে জানান তিনি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান লিনা বলেন, সমাজসেবা অফিস থেকে কোনো ভাতাভোগীকে কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য ফোন দেওয়া হচ্ছে না। হ্যাকাররা প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে ফোন দিচ্ছে। হ্যাকাররা টাকা নিয়ে গেলে তো আমাদের কিছু করার নেই। ভাতাভোগীরা সচেতন না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। ভাতাভোগীদের সচেতন ও সজাগ থাকার জন্য আমরা পিন নাম্বার পরিবর্তনসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। পুরো উপজেলা কতজন ভাতাভোগীর টাকা হ্যাকাররা নিয়ে গেছে তার সংখ্যা জানা নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close