জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ তাদের চিন্তার স্বাধীনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে আবার ফিরে পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ‘বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যানের শতবর্ষ উদযাপন : ঢাকার উত্তরাধিকার’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগ এবং সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল সায়েন্সেস যৌথভাবে দুদিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১৯২৪ সাল অনেক পেছনে রেখে এসেছি। কালের পরিক্রমায় বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আবিষ্কারটি কি এতটুকু স্লান হয়েছে? পদার্থবিদরা বলছেন, মোটেই না। যার প্রমাণ এ আবিষ্কারের ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য প্রমাণ করে সৃষ্ট বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে ২০০১ সালে। এ নিয়ে গবেষণা চলছেই। তিনি বলেন, শুনেছি কার্জন হলে পঠন-পাঠনের কাজের ভেতরেই নবীন অধ্যাপক বসুর কাছে নতুন কোয়ান্টাম থিওরির শুরুর মধ্যে যে অসংগতি ধরা পড়েছিল, তার থেকেই ওই আবিষ্কারের চিন্তাটি তার মাথায় এসেছিল। অখ্যাত জায়গার অখ্যাত এ বিজ্ঞানীর এ অদ্ভুত আবিষ্কারের কথা দুনিয়ার কোন জার্নাল ছাপতে যাবে? কিন্তু নিজের কাজের ওপর অত্যন্ত আস্থাশীল বসু সোজা সেদিনের দুনিয়ায় সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছে জার্মানিতে পাঠিয়ে দিলেন এ আবিষ্কার নিয়ে তার ছোট্ট প্রবন্ধটি। সঙ্গে চিঠি দিলেন, নিজের পরিচয় দিলেন আমি আপনার সরাসরি ছাত্র না হলেও আপনার ভাব-শিষ্য এই বলে। আইনস্টাইন চট করে বুঝে ফেললেন এ কোনো সাধারণ আবিষ্কার নয়। এর সঙ্গে নিজেরও একটি বাড়তি ধারণা যোগ করে এবং প্রবন্ধটি নিজের হাতে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে পদার্থবিদ্যার বিখ্যাত জার্নালে পাঠিয়ে দিলেন। সেই থেকে এটি বোস-আইনস্টাইন থিওরি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিপ্লবের ফসল আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় সব সংস্কার করতে, এর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির সব প্রয়াস নিতে প্রস্তুত রয়েছে। এ কাজে নিবেদিত সবার কাছ থেকে চাহিদা, পরামর্শ আসতে হবে। নিজেদের ওপর আস্থা থাকলে এটি আমরা পারব; যেমন আস্থা বসুর ছিল। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, কলকাতার শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পার্থ ঘোষ প্রমুখ।

"