বদরুল আলম মজুমদার
বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
* দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের আহ্বান জামায়াতের * বিএনপির শোভাযাত্রা কাল
আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আধিপত্যবাদী চক্রের সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে সিপাহি-জনতা কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল। তাদের ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমেই রক্ষা পায় সদ্য অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এবারের বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করবে বিএনপি। দিবসটি সামনে রেখে বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি এ আহ্বান জানান তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার দীপ্ত শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস, যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আমি জামায়াতের সব শাখা ও দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
নতুন সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি জাতীয় দিবস পালন রহিত করা হলেও ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি সরকারের সময় দিবসটিতে সরকারি ছুটি থাকলেও গত সরকার সেটি বাতিল করে দেয়। এবারের দিবসটি সামনে রেখে বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৮ নভেম্বর শোভাযাত্রা। বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারনে এবারের শোভাযাত্রাতে সর্ববৃহৎ জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এ উপলক্ষে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভা করেছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আজ নভেম্বর ৭ বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনে শোভাযাত্রা করলে সড়কে যানজট তৈরি হতে পারে। তাই এক দিন পিছিয়ে ৮ নভেম্বরে শোভাযাত্রার আয়োজন রাখা হয়েছে। এবাবের শোভাযাত্রাকে স্মরণীয় করতে উত্তোলন করা হবে। ওইদি
এরই মধ্যে রাজধানীর সব ইউনিটকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
৭ নভেম্বর ঘিরে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনে ঢাকাসহ সারা দেশে শোভাযাত্রাসহ ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গত ৩১ অক্টোবর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যারয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের এক যৌথসভা শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ৭ নভেম্বরের গুরুত্বকে তুলে নিয়ে আসার জন্য আমরা এবার এ দিবসটি ব্যাপকভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ৬ নভেম্বর ঢাকায় আলোচনা সভা করা হবে। পরদিন ৭ নভেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা ন শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বিএনপির নেতারা। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখা হয়েছে।
পরদিন ৮ নভেম্বর বিকাল ৩টায় রাজধানীতে শোভাযাত্রা করবে বিএনপি ফখরুল বলেন, ‘৭ তারিখ বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনে শোভাযাত্রা করলে সড়কে যানজট তৈরি হতে পারে, তাই এক দিন পিছিয়ে ৮ নভেম্বরে শোভাযাত্রার আয়োজন রাখা হয়েছে।’ সেদিন বিভাগীয় শহরগুলোয় শোভাযাত্রার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভাও হবে। এছাড়া বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো আলাদাভাবে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেবেন বলে জানান মহাসচিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দি। ৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, পরে দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
বিএনপি এই দিনকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে। অন্যদিকে গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করত। এবারের দিবসটি সামনে রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। দিবসটির গুরুত্বারোপ করে বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শোভাযাত্রা সামনে রেখে নিজেদের প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদ্য নিযুক্ত আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, এবারের শোভাযাত্রার মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করব রাজধানীর বিএনপি কতটা শক্তিশালী। এরই মধ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়ে হয়েছে, আগামীকাল আমরা জনবিস্ফোরণ ঘটাব, ইনশাআল্লাহ। শোভাযাত্রা বিষয়ে একই কথা বলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। তিনি বলেন, আমরা বৃহৎ সমাগম করব।
"