সোহেব আহমেদ
ফের হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প
* যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট * ১৩১ বছরের রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস * সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত * আমেরিকার স্বর্ণযুগ গড়ার প্রতিশ্রুতি
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার ১৩১ বছরের আগেকার রেকর্ড ভেঙে দোর্দ- প্রতাপে হোয়াইট হাউসের মসনদে ফিরলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের আগের জনমত জরিপের সব হিসাব-নিকাশ উল্টে দিয়ে দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান দলীয় এই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তিনি। তার বয়স এখন ৭৮ বছর। এর আগে জো বাইডেন ৭৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত। এদিকে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা না হলেও নিজের বিজয় দাবি করে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। এ সময় ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার জনগণের জন্য এটি চমৎকার জয়। এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিনিরা আরেকবার বেছে নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এর মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মতো এমন একজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেছেন, যিনি একজন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের ইতিহাস ভাঙতে চেয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প ৬০ বছর বয়সি কমলা হ্যারিসকে হারিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে তিনি আরেক নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রকাশিত নির্বাচনী ফল অনুযায়ী, দেশটির নির্বাচনে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য ২৭০টির প্রয়োজন। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ সময় বুধবার পৌনে ৪টার দিকেই এই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান। দেশটির নির্বাচনে ফল নির্ধারণী ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্য খ্যাত জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, মেইন, পেনসিলভানিয়ায় লাল শিবিরের জয়ে হোয়াইট হাউসের মসনদ নিশ্চিত হয় ট্রাম্পের। নির্বাচনের আগে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কথার লড়াই আর বিভাজনের রাজনীতিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। শুরু থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠান এই দুই প্রার্থীর মাঝে যে তুমুল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে সেই আভাস দিয়ে আসছিল মতামত জরিপে। যদিও এসব জরিপের বেশিরভাগেই নীল শিবিরের প্রার্থী কমালাকেই এগিয়ে রাখতে দেখা যায়। কিন্তু মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিতে অটল ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই বেছে নিলেন মার্কিন ভোটাররা।
মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণী দোদুল্যমান রাজ্য-খ্যাত উইসকনসিনের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। উইসকনসিনের ১০টি ইলেক্টোরাল ভোটের মাধ্যমে ম্যাজিক ফিগার ২৭০ পেরিয়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন বার্তা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২৭৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলীয় কমালা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। তবে এখনো কয়েকটি রাজ্যে আংশিক ভোট গণনা বাকি রয়েছে।
শুধু ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটই বেশি পাননি ডোনাল্ড ট্রাম্প, বরং পপুলার ভোটও প্রায় ৫০ লাখ বেশি পুড়েছেন নিজের ঝুলিতে। এর আগে ফ্লোরিডার পাম বিচ কাউন্টি কনভেনশন সেন্টারে লাল ঢেউয়ের গর্জনে মেতে ওঠা সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকা আমাদের এক অভূতপূর্ব ও শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে।’
ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, ‘আমেরিকার জনগণের জন্য এটি চমৎকার জয়। এটা আমাদের আমেরিকাকে আবারও মহান করার সুযোগ দেবে।’
এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ সময়ে মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তার রানিং মেট জে ডি ভান্স।
চার বছর আগের ভোটে হেরে হোয়াইট ছাড়ার পর আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন রেকর্ড এর আগে করেছিলেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। যিনি মেয়াদ শেষে নির্বাচনে হেরে গিয়ে চার বছর পর ফের জয়ী হন। সাবেক ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট ক্লিভল্যান্ড প্রথমবারের মতো এমন অনন্য সফলতা দেখিয়েছিলেন ১৮৯৩ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে। ১৩১ বছরের আগেকার সেই অনবদ্য রেকর্ড ভাঙার সুযোগ হাতিয়ে নিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প।
এদিকে ট্রাম্পের এই অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে; নতুন আমেরিকান নেতৃত্বের সূচনা হতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে দেশটির গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ও পররাষ্ট্র সম্পর্ক পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা এডিসন রিসার্চ বলছে, ৭৮ বছর বয়সি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টিরও বেশি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে বুধবার হোয়াইট হাউস পুনরুদ্ধার করেছেন; যা দেশটিতে চলমান মেরূকরণের রাজনীতিকে আরো গভীর করে তুলেছে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় পরের বছরের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব চালান ট্রাম্পের কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে চালানো ওই সহিংসতার পর ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখেছিলেন অনেকে। কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নিজ দলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনী দৌড় থেকে দূরে সরিয়ে দেন তিনি।
এরপর মার্কিন অর্থনীতিতে জেঁকে বসা মুদ্রাস্ফীতি আর দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দশায় ভোটারদের উদ্বেগকে পুঁজি করে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কথা জানিয়ে দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসনের অবসানের রূপকল্প তুলে ধরে ভোটারদের মন জয় করেন তিনি।
বিপরীতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসী পরিবারের সন্তান কমালা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রকে অভিবাসীদের জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে তুলবেন বলে ভোটারদের কাছে কমালার বিষোদগার করেন। শেষ পর্যন্ত মার্কিন রাজনীতির বিদ্বেষ আর বিভাজনের রূপরেখায় কমালা হ্যারিসকে হারিয়ে দিলেন রিপাবলিকান ট্রাম্প।
ভোটের পর বুধবার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সমর্থকদের নিয়ে ইলেকশন নাইট পার্টিতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল কমলা হ্যারিসের। কিন্তু নির্বাচনের ফলে বিপর্যয়ের আভাস মেলায় সেই অনুষ্ঠান স্থলে যাননি তিনি। সেখানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে খালি চেয়ার আর জনশূন্য মঞ্চ।
"