মো. জাহিদুল ইসলাম

  ০৩ নভেম্বর, ২০২৪

‘সাবিনাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস’

* এখন থেকে কমিটি নয়, খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দেওয়া হবে : ক্রীড়া উপদেষ্টা * প্রধান উপদেষ্টাকে নারী দলের জার্সি উপহার দিলেন মেয়েরা * যা কিছু চাওয়ার আছে বিনা দ্বিধায় লিখে পাঠাও : ড. ইউনূস

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের প্রতিটি সদস্যকে তাদের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং দাবি লিখিত আকারে জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ‘তোমরা যা চাও তা লিখতে দ্বিধা করো না। আমরা তোমাদের দাবি পূরণের চেষ্টা করব। যদি এখনই কিছু সমাধান করা যায়, আমরা তা করব’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস।

গতকাল ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সদস্যরা তাদের স্বপ্ন এবং দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে নারী দলের জার্সি উপহার দেন মেয়েরা।

গত ৩০ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে সপ্তম সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারানোর পর বাংলাদেশ দলকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বিজয়ী খেলোয়াড়দের দাবিগুলো মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।

এই সাফল্যের জন্য আমি পুরো জাতির পক্ষ থেকে তোমাদের অভিনন্দন জানাই। জাতি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়। তোমরা আমাদের সেই সাফল্য এনে দিয়েছ, এখন থেকে কমিটি নয়, খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দেওয়া হবে খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক বক্তব্যে বলেন প্রধান উপদেষ্টা। দলনেতা সাবিনা খাতুন সংবর্ধনার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সংবর্ধনায় যোগ দিতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।

‘অনেক বাধা অতিক্রম করে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। শুধু নারী ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের নারীরা সাধারণভাবেই অনেক সংগ্রামের মুখোমুখি হয়,’ বলেন তিনি। ২০০৯ সালে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করা সাবিনা, ফুটবলকে নেশা হিসেবে গ্রহণ করার সাহস দেখানোর জন্য পূর্ববর্তী প্রজন্মের অবদানের কথাও স্মরণ করেন।

অধিনায়ক সাবিনা বলেন যে, তাদের অনেকেই অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন এবং তাদের পরিবারের ভরণপোষণ করতে হয়। আমাদের বেতন খুব একটা বেশি নয় বলে আমরা পরিবারকে তেমন সহায়তা করতে পারি না,’ বলেন সাবিনা। তার কিছু সতীর্থ, যেমন মারিয়া মান্ডার সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে এই স্ট্রাইকারের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে।

সাফজয়ী দলে ছয়জন খেলোয়াড় উপহার দেওয়া ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলসিন্দুর গ্রামের মারিয়া ছোটবেলায় বাবাকে হারান এবং মায়ের কাছে লালিত-পালিত হন। উইঙ্গার কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকায় তাদের থাকার ব্যবস্থার বিষয়টি উত্থাপন করেন, মধ্যমাঠের খেলোয়াড় মানিকা চাকমা পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম দুর্গম উপজেলা লক্ষ্মীছড়িতে ফুটবলার হওয়ার জন্য যেসব কষ্ট করতে হয়েছে তার কথা জানান। মধ্যমাঠের খেলোয়াড় শোভা রানী তার জন্মস্থান দিনাজপুর জেলার রানীশংকৈল গ্রামের অবকাঠামোগত দুর্বলতার বিষয়টি বর্ণনা করেন।

উইঙ্গার কৃষ্ণা প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেন, এশিয়ার বাইরে, বিশেষ করে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বার্সেলোনার বিপক্ষে তাদের জন্য একটি প্রীতি ম্যাচের ব্যবস্থা করার জন্য। অনুষ্ঠানে কোচ পিটার বাটলার এবং ম্যানেজার মাহমুদা আক্তারও উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, সুপ্রদীপ চাকমা, বিধান চন্দ্র রায় এবং নূরজাহান বেগম ও এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

খেলোয়াড়দের ফ্ল্যাটের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কাছে তারা এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তাদের লিখিত দাবির মধ্যে বিষয়টি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আমাদের সক্ষমতার মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমরা বাইরে থেকে ক্রিকেট টিমের অনেক পিআর দেখি, কিন্তু তাদেরও সমস্যা আছে। ছোট ছোট সমস্যা অ্যাড্রেস করা হয়নি।’

খেলোয়াড়রা খেলাধুলার মূল স্টেকহোল্ডার জানিয়ে আসিফ বলেন, ‘তারাই অগ্রাধিকারে থাকবে। এতদিন পর্যন্ত অগ্রাধিকারে থাকত কমিটির সদস্যরা। সেটা আর হবে না। এটা আমার সময়, আমি নিশ্চিত করব।’

নারী ফুটবল দলের বকেয়া বেতনের বিষয়ে জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘তাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া আছে। বাফুফেতে এতদিন কাজী সালাউদ্দিন সাহেবের কমিটি ছিল, এখন নতুন কমিটি এসেছে, তাদের নিয়ে ওয়ার্কআউট করব। যাতে করে ভবিষ্যতেও কখনো বেতন বকেয়া না হয়।’ উপদেষ্টা বলেছেন বাফুফের বিরাট অঙ্কের ঋণের তথ্য সামনে এসেছে। ‘আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে নতুন কমিটিকে অডিট করার জন্য বলেছি। যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close