নিজস্ব প্রতিবেদক
ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু
২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল আরো ৪ জনের
দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ১২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন। এ নিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২৪১ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৮২ জন। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৯৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। যার মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৮৭৪ জন, বাকি ২ হাজার ৮০ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে।
এর আগে সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয়েছে ৮০ জনের। শুধু রাজধানী নয়, রাজধানীর বাইরেও বাড়ছে এই সংখ্যা। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরের, আর মৃত্যুর সংখ্যা বেশিরভাগই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে শক সিনড্রোম ও ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট জটিলতাকে দায়ী করা হলেও দেরিতে হাসপাতালে আসা, চিকিৎসা পেতে বিলম্ব, দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ এবং একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তও দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদারের মতে, সাধারণত জ্বর থাকা অবস্থায় ডেঙ্গু রোগী মারা যায় না বা জটিলতা শুরু হয় না। বরং বিপদ শুরু হয় চার দিন পর জ্বর কমার পরে। আগে সাধারণত ৫-৬ দিনের সময় ক্রিটিক্যাল ফেজ শুরু হতো কিন্তু এখন ৩ দিনের শুরুতেই অনেক রোগী শকে চলে যাচ্ছে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ২ দিন পরও হতে পারে। আবার অল্প জ্বরেও অনেকের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই জ্বর কমে গেলেই আরো সতর্ক হতে হবে, কারণ এসময় রক্তে প্লাটিলেটও দ্রুত কমতে শুরু করে।
তিনি বলেন, ‘যারা দ্বিতীয় বা তার বেশি বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, সাধারণত তারাই ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে বা হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাদের আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে এবং মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়। তবে প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভারে রোগী সাধারণত ৫-৭ দিনে ভালো হয়ে যায়। তাই সতর্ক সংকেতগুলো সবার জানতে হবে এবং এক বা একাধিকবার দেখা দিলেই রোগীকে অতিদ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে হলে চিকিৎসাসেবা বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরি। তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা শহরকেন্দ্রিক। যাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দরকার তারাও পরীক্ষা করতে শহরের বড় মেডিকেল কলেজে আসছে, যাদের পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার তারাও আসছে, গুরুতর রোগী তো আসবেই। কাজেই মাধ্যমিক হাসপাতাল বা প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলে বড় হাসপাতালে চাপ কমে যায়। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে যারা আসছেন, তাদের চিকিৎসা আরো ভালোভাবে করা যায়।’
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সত্যজিৎ সাহা বলেন, ‘যারা একবার আক্রান্ত হয়েছে, তারা যখন দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বার আক্রান্ত হয়, তারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ। দ্বিতীয়বার যারা আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়। কারণ শরীরের মধ্যে তখন রক্টি ইমিউনো রিঅ্যাকশন তৈরি হয়, যার ফলে শরীরে জটিলতা বেড়ে যায়।’
"