নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পবিসের ছয় কর্মকর্তা রিমান্ডে
বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে গতকাল শনি ও গত শুক্রবার পল্লী বিদ্যুতের ৬ কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর খিলক্ষেত থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গতকাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) দুই কর্মকর্তার দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এর আগে গত শুক্রবার পল্লী বিদ্যুতের আরো ৬ কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এদিকে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ১৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল শনিবার লক্ষ্মীপুরের পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আরিফুল ইসলাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এজিএম (আইটি) এস কে শাকিল আহমেদকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক আশিকুর রহমান দেওয়ান তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। আসামিদের পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামান তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে শুক্রবার তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গতকাল রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আলী হাসান মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম (৪৮) ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (আইটি) এস কে শাকিল আহমেদ (৩১)। গত শুক্রবার রাজধানীর খিলক্ষেত থানার পৃথক দুই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ৬ জন কর্মকর্তাকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওইদিন রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন মুন্সীগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার রাজন কুমার দাস, ব্রাক্ষণবাড়িয়া নবীনগরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, কুমিল্লার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শ্রী দীপক কুমার সিংহ, মাগুরার শ্রীপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাহাত, নেত্রকোনার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মনির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর বেলাল হোসেন। এদের মধ্যে বেলাল হোসেন এক মামলার আসামি। অপর পাঁচজন আরেক মামলার আসামি।
এর আগে বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে ১৭ অক্টোবর খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড খিলক্ষেত থানার পরিচালক প্রশাসন (আইন শাখার) আরশাদ হোসেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা/কর্মচারী একত্রিত হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি পরিচয়ে পরস্পর যোগসাজশে জরুরি সেবা বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে এবং বিগত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীদের মদদে নানা অযৌক্তিক দাবি দাওয়ায় ষড়যন্ত্র করে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছেন। বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম কাজে লিপ্ত আছে।
বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম কাজে লিপ্ত আছেন তারা। তাদের এ ধরণের কার্যকলাপ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চরমভাবে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার শামিল। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা, বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্মানহানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা তথা জনমনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সরকারকে চরমভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা, যা দেশদ্রোহির শামিল।
কুমিল্লায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১৫৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ৫ : কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ১৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রেখে আন্দোলনের নামে গ্রাহকদের ভোগান্তি দেওয়া, রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগে চান্দিনা থানায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা গত শুক্রবার মামলাটি করেন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলা হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে শুক্রবার রাতে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হুদা জানান, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কুমিল্লা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মিল্টন ঘোষ শুক্রবার দুপুরে মামলাটি করেছেন। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ১০০ থেকে ১৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বাইমানা গ্রামের সহিদুল ইসলাম (২৬), চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কামানকান্দি মাথাভাঙ্গা গ্রামের নূর মোহাম্মদ (২৮), চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার খন্দকিয়া গ্রামের ফয়সাল চৌধুরী (৩৭), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পবনপুর তারাবো গ্রামের তানভীর আহমেদ (৩৩), ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা সদরের মিজানুর রহমান (৩০)। তাঁরা কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে আন্দোলন করেন কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে লক্ষাধিক গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হন। একই দিন সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় দফা বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন চলাকালে চান্দিনার পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাও করেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করে। পরে শুক্রবার দুপুরে হওয়া মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।
এই বিষয়ে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রথমে তারা (পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা) ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু করি। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যার পর আবারও তারা দুই ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কার্যালয় ঘেরাও করেন। এ সময় যৌথ বাহিনী সেখানে অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করে। এ ঘটনায় জড়িত অপর ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
কুমিল্লা জেলায় মোট পল্লী বিদ্যুতের ৪টি সমিতির মাধ্যমে জেলার ১৭টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সব কটি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে আন্দোলন করেন। শুধু কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একই দিন সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় দফায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে জেলার বাকি তিনটি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি বলে শুক্রবার রাতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
জেলায় কর্মরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। এসব দাবি নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে বুধবার গেলে তিনি আন্দোলনকারীদের কথা না শুনে উল্টো তাদের কয়েকজনকে বরখাস্ত করাসহ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ এবং আন্দোলনকারীদের নামে দেওয়া মামলা ও বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
"