নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ অক্টোবর, ২০২৪

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আবাসন খাত

মন্দা কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আবাসন খাত। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় বেড়েছে সম্পত্তি বিক্রির পরিমাণ। এসব এলাকায় গত দুই মাসে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। গড়ে উঠছে নতুন নতুন অট্টালিকা। তবে সেই হারে বাড়েনি গাড়ি বেচাকেনা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা আত্মগোপনে গিয়ে বিক্রি করছেন ফুলেফেঁপে ওঠা সম্পদ। তবে এসব সম্পদ যেন পাচার না হয়, সেদিকে নজর দেওয়ার তাগিদ তাদের। তারা মনে করছেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করায় অসাধু

কর্মকর্তারা সম্পদ বিক্রিতে নজর দিয়েছেন।

রাজধানীর অভিজাত এলাকাখ্যাত গুলশান, বনানী, বারিধারা। কূটনৈতিকপাড়া হিসেবেও পরিচিত এসব এলাকা। সাধ আর সাধ্যের সমন্বয়ে যেখানে তৈরি হয় একেকটি প্লট, ফ্ল্যাট কিংবা আবাসন। পারিবারিক সম্পত্তির বাইরে এখানে আবাসনে আগ্রহীদের অধিকাংশই বিত্তবান। যাদের সাধের চেয়ে সাধ্যের সূচক ঊর্ধ্বে। পরিপাটি, পরিকল্পিত এ এলাকায় হঠাৎই বেড়েছে ব্যবহৃত ফ্ল্যাট, বাড়ি বিক্রির পরিমাণ। কিন্তু বিত্তবানদের এ এলাকায় তা বোঝার উপায় কী? গুলশান ও বারিধারার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও অনলাইনে ভরপুর এসবের বিজ্ঞাপন। ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, আবাসিক প্লট, দোকানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনাসহ সম্পত্তি কেনাবেচার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিপ্রপার্টি ডটকমে ঢুকে দেখা যায়, শুধু গুলশান বনানী বারিধারা নয়, ঢাকার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় বেড়েছে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির পরিমাণ। চট্টগ্রামেও এ সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে।

তথ্য বলছে, গত দুই মাসে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে ফ্ল্যাট বিক্রেতার হার। হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ যাচাই করতে এখন টেলিভিশনের টিম মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিক্রেতাদের সঙ্গে। তাদের দাবি ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহ কম ক্রেতাদের। একজন বিক্রেতা বলেন, আমরা প্রোপার্টিওয়ালাদের সঙ্গে একটা ফিক্সড প্রাইজ করে অ্যাগ্রিমেন্ট করে আমরা বিক্রির দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা সেপ্টেম্বর থেকে এসব ফ্ল্যাট নিয়ে কাজ করছি। তেজগাঁওয়ের পুরোনো গাড়ির শোরুম রয়েছে কয়েকটি। এরকমই একটা শোরুমে ২০১৯ সালের প্রাডো মডেলের টয়োটা কোম্পানির দামি গাড়ি বিক্রির জন্য তুলেছেন এক ব্যবসায়ী। পাশের আরেকটি শোরুমেও দেখা গেল ল্যান্ড ক্রুজারসহ দামিসব গাড়ি। তাহলে এখানেও কি বেড়েছে দামি গাড়ি বিক্রির পরিমাণ?

একজন গাড়ি বিক্রেতা বলেন, বড় বড় গাড়িগুলো বিক্রি করার মতো পার্টি অনেক। প্রাডো, হ্যারিয়ার, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিস নাকি যারা ব্যবহার করছে তারা নাকি আওয়ামী লীগঘেঁষা লোক বা আওয়ামী লীগের নেতা। এরকম অনেক গাড়ির খবর আমাদের কাছে আসছে। তারা তো বিভিন্ন জায়গায় আছে। গাড়ি কিনলে তো মালিক ছাড়া নাম পরিবর্তন হচ্ছে না। সেজন্য ওই গাড়িগুলো কেউ কিনতে পারছে না। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে, ব্যবসায়ী কিংবা সরকারি কর্মকর্তা, বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে বরাবরই তাদের পছন্দের শীর্ষে গুলশান, বনানী, বারিধারা। কূটনৈতিকপাড়া হওয়ায় এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও উন্নত। পুরোনো গাড়ি কিংবা বাড়ি বিক্রয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত বছরের আগস্টের তুলনায় গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী চলতি বছরের আগস্টে গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডিসহ অভিজাত এলাকায় পুরোনো বাড়ি বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। তবে সে অনুপাতে বাড়েনি বেচাকেনা। অনেকটা ক্রেতা সংকটে ভুগছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিপ্রোপার্টি ডটকমের মহাব্যবস্থাপক খান তানজীল আহমেদ বলেন, গুলশান, বনানী, বারিধারার লোকেশনগুলোয় অনেক প্রোপার্টি অ্যাভেইলেবল হচ্ছে শেষ দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে। যেটা আগে এত ছিল না। ক্রেতার সংখ্যা কিন্তু অনেক কমে গেছে। যারা কালো টাকা নিয়ে সম্পত্তি তৈরি করেছেন তারা চিন্তা করছে সম্পত্তিটা বিক্রি করে দেওয়ার কথা। রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, যারা বেশি দামে ফ্ল্যাট কিনত, সেটা কিন্তু এখন একেবারেই কমে গেছে, আর এতেই বোঝা যাচ্ছে যে কারণটা কী। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গুলশান এলাকায় ৪ হাজার স্কয়ার ফিটের বাসার সর্বোচ্চ দাম হাঁকানো হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা, যা অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা কম বলেও মনে করছেন অনেকে। তবে জায়গাভেদে এর তারতম্য রয়েছে।

অর্থনীতিতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি, বিত্তবান বা প্রভাশালীর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন অনেকেই। গড়েছেন অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পদ। তথ্য বলছে, এসব সম্পদ বিক্রি করে তা টাকায় রূপান্তর করে সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু কেন? ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে? নাকি আর্থিক সংকটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, গণতন্ত্রের প্র্যাক্টিসের অনুপস্থিতি প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। ইদানীং আমরা একটা নমুনা দেখতে পারছি যে বাংলাদেশে কিছু মানুষের সম্পদ এমনভাবে গড়ে উঠেছে তার পেছনে বেইজ নেই। অর্থাৎ বেইজলেস সম্পদ যখন গড়ে ওঠে তখন তারা এ জায়গা থেকে সম্পদটাকে সড়ানোর জন্য, কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া হিসেবে আসলে বিক্রি করতে চায়। দুদক, ট্যাক্স অথরিটি যেন খুব বেশি মাত্রায় বুঝতে না পারে, তার একটা সতর্ক অবস্থা বিরাজ করছে, এর মধ্যে যতটুকু ট্রানজেকশন করা সম্ভব ততটুকু হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close