নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

এইচএসসির ফল আজ

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে আজ মঙ্গলবার। তবে ফল প্রকাশের জন্য এবার গতানুগতিক কোনো আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ কার্যালয়ে ফল প্রকাশ করবেন। গণমাধ্যমকর্মীরা এ সময় পরীক্ষা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে পারবেন। বিগত বছরগুলোতে এসএসসি এবং এইচএসসিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পাবলিক পরীক্ষার ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা তার কাছে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করতেন। এবার সেই আনুষ্ঠানিকতা আর হচ্ছে না।

কীভাবে জানা যাবে ফল : আনুষ্ঠানিক প্রকাশের পরপরই শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে তাদের ফলাফল জানতে পারবেন। ওয়েবসাইট ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা www.dhakaeducationboard.gov.bd এবং www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে তাদের ফলাফল দেখতে পারবে। এই ওয়েবসাইটগুলোর ‘ফলাফল কর্নার’-এ গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে তথ্য প্রদান করতে হবে।

এসএমএস : এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে, শিক্ষার্থীদের নিম্নলিখিত ফরম্যাটে এসএমএস পাঠাতে হবে : HSC<স্পেস>শিক্ষা বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর<স্পেস>রোল নম্বর<স্পেস>২০২৪ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

ফল নির্ধারণ যেভাবে : শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, বাতিল পরীক্ষাগুলোর ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে যেসব বিষয়ের নামে হুবহু মিল রয়েছে, সেগুলোতে শতভাগ এসএসসির নম্বরই শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে পেয়েছেন। যদি কারো বিষয়ের ও বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) মিল না থাকে, সেক্ষেত্রে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং নীতিমালা’ অনুসরণ করা হয়েছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির প্রধান এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার বলেন, দুই পদ্ধতি অনুসরণ করে বাতিল পরীক্ষাগুলোর ফল তৈরি করেছি আমরা। প্রথমত খুবই সরল একটা প্রক্রিয়া, সেটা হলো এসএসসিতে ওই বিষয়ে শিক্ষার্থী যে নম্বর পেয়েছিল, এইচএসসিতে সেই নামে বিষয় থাকলেই তাতে এসএসসির প্রাপ্ত নম্বর পেয়ে যাবে।

‘দ্বিতীয়ত প্রক্রিয়াটিও খুব জটিল নয়। এটা করোনাকালে ফল তৈরিতে যে সাবজেক্ট ম্যাপিং ছিল, সেটা অনুসরণ করে করা হয়েছে। এতে কেউ বঞ্চিত হবে না’ বলেও উল্লেখ করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

সাবজেক্ট ম্যাপিং যেভাবে : কোনো পরীক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসিতে একই বিভাগের হলে ফল তৈরি এসএসসির ভিত্তিতে। কেউ যদি এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে থাকার পর এইচএসসিতে বাণিজ্য বা মানবিক বিভাগে চলে আসে সেক্ষেত্রে কীভাবে ফল নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে জানার আগ্রহ বেশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘এটা সাবজেক্ট ম্যাপিং নীতিমালায় স্পষ্ট করে বলা আছে। ধরুন কেউ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি দিয়েছিল। তিনি সেখানে পদার্থ বিজ্ঞানে ৮৫ নম্বর পেয়েছিল। এবার সে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে চলে এসেছে। তার হয়তো পদার্থ বিজ্ঞানের জায়গায় পৌরনীতি বা সমাজকল্যাণ আছে। অথবা অন্য কোনো বিষয়। তাকে পৌরনীতিতে এবার পদার্থ বিজ্ঞানে এসএসসিতে যে নম্বর ছিল, সেটা পুরোটা দেওয়া হবে।’

‘একইভাবে কেউ এসএসসিতে উচ্চতর গণিত পড়েছে, পরীক্ষা দিয়েছে এবং তাতে ৭৫ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু এইচএসসিতে সে বাণিজ্য বিভাগে চলে এসেছে। তাহলে তাকে উচ্চতর গণিতের ওই নম্বরটা হিসাববিজ্ঞান বা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দেওয়া হবে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তন করা পরীক্ষার্থীদের কোন বিষয়ের পরিবর্তে কোন বিষয়কে ধরা হবে তা নীতিমালায় আছে। কেউ এতে বঞ্চিত হবেন না,’ যোগ করেন বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

তিনি আরো বলেন, ‘এটা নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা বা রহস্য সৃষ্টির সুযোগ নেই। আমাদের করোনাকালীন ফল প্রকাশের অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি, টেবুলেশন শিট তৈরি ও মাঝপথে পরীক্ষা বাতিল হওয়ার বিষয়ে বোর্ডের সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালা মেনেই বোর্ড ফল প্রস্তুত করেছে। কেউ বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই।’

মাত্র ৭টি বিষয়ের পরীক্ষা সম্পন্ন : প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্দোলনের কারণে মাত্র ৭টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এইচএসসি পরীক্ষা। গত ৩০ জুন ১০টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমানের পরীক্ষা শুরু হলেও সিলেট শিক্ষা বোর্ডে বন্যার কারণে পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই। কিন্তু মাত্র সাতটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্রিক সহিংসতার কারণে ১৬ জুলাই থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হলেও পরবর্তীতে সহিংসতা আরো তীব্র আকার ধারণ করলে ১ আগস্ট পর্যন্ত সকল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।

রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতিসাপেক্ষে ৪ আগস্ট থেকে পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকেই যাচ্ছিল না বিধায় তা আবারও স্থগিত করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সৃষ্ট সহিংসতার প্রাদুর্ভাবে পরীক্ষা আরো বিলম্বিত হয়। এ সময় কিছু পরীক্ষা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রশ্নপত্র নষ্ট হয়ে যায়।

অবশেষে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তখন অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে আগ্রহী না হয়ে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।

পরিশেষে অন্তর্বর্তী সরকার দুই সপ্তাহের জন্য পরীক্ষা স্থগিত করে এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ২০ আগস্ট ৫০০ জনেরও বেশি পরীক্ষার্থী সচিবালয়ে বিক্ষোভ করে এবং পরীক্ষা বাতিল না করলে পরীক্ষা বর্জনের হুমকি দেয়। অবশেষে সরকার তাদের দাবি মেনে নেয় এবং বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা দেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close