নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আমলারা

* সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ৫ মুখ্য সচিবের বিরুদ্ধে মামলা * তিনজন এরই মধ্যে গ্রেপ্তার দুজন আত্মগোপনে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাবেক এমপি-মন্ত্রিদের পাশাপাশি মামলায় নাম আসছে সাবেক শীর্ষ আমলাদেরও। জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে একের পর এক মামলা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই হত্যা মামলা। এভাবে ঢালাও মামলার কারণে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিগত সরকারের সময় কিছু কর্মকর্তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। যারা বিগত সরকারের সময় সীমালঙ্ঘন করেছেন, বাড়াবাড়ি করেছেন, তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ মুখ্য সচিবের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। দুজন আত্মগোপনে। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, শীর্ষ পদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অতীতে কখনো হত্যা মামলা হয়নি। গ্রেপ্তারও হননি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ ও নজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্য দুই মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও আহমেদ কায়কাউসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একজন দেশের বাইরে, অন্যজন আত্মগোপনে রয়েছেন। প্রশাসনের আরেক শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দায়িত্বে থাকা দুই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তারাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন।

আরেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের নামে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। অবশ্য মামলার বাদী বলছেন, ‘ভুলবশত’ তাকে আসামি করা হয়েছে। মাহবুব হোসেন গত বুধবার অবসরের আগে শেষ অফিস করেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন সচিবের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা হয়েছে। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুই মাসে বেশ কয়েকজন সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) এবং বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তাদের নামে মামলা হচ্ছে। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন চারজন সচিব। তারা হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও একই মন্ত্রণালয়ের আরেক সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও ফয়েজ আহমেদ এবং সাবেক সচিব আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।

মামলা-গ্রেপ্তার নিয়ে দুই মত : আমলাদের বিরুদ্ধে করা মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগই হত্যা মামলা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমলাদের বিরুদ্ধে এমন মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা কখনো ঘটেনি। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে মামলা ও গ্রেপ্তার নিয়ে সাবেক পাঁচজন সচিব, একজন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ, দুজন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বর্তমানে বিভিন্ন পদে কর্মরত পাঁচজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দুই ধরনের মত পাওয়া গেছে। একপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, বিগত ১৫ বছরে আমলারা রাজনীতিবিদদের মতো আচরণ করেছেন। তারা আওয়ামী লীগের মন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্যের মতো কথা বলতেন। তাছাড়া ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন তাদের মাধ্যমে হয়েছে। ওই দায় তারা এড়াতে পারেন না। এতে আমলাদের ওপর মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে।

এ পক্ষ আরো বলছে, বিগত ১৫ বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রশাসনে অনেক যোগ্য কর্মকর্তাকে পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে। এ দায়ভার তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবরা এড়াতে পারেন না। সব মিলিয়ে আমলারা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। তাদের কর্মকাণ্ডের খেসারত এখন পুরো আমলাতন্ত্রকে দিতে হচ্ছে। মামলার বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তার নামে যে এলাকায় মামলা হয়েছে, তিনি সেখানে কখনো যাননি। মামলার বাদী অজ্ঞতাবশত কিংবা না বুঝে অথবা প্রতারণার উদ্দেশ্যে তার নামে মামলা করেছেন। তিনি কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেন।

ঢালাওভাবে মামলার আসামি করার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হত্যা মামলা করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হয়। এখন ঢালাওভাবে আসামি করা হচ্ছে। থানায় মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা দরকার। সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, সরকার আসবে, সরকার যাবে। আমলাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কিন্তু গত ১৫ বছরে দলীয় আমলাতন্ত্র হয়েছে। আমলারা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মিশে গেছেন, যার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে। এখন যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close