নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই-আগস্ট হত্যার বিচার আগে করতে হবে : ডা. শফিকুর
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগের করা আইন দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যার বিচার করতে হবে। গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ঢাকা মহানগরী উত্তরের বার্ষিক সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা মো. গোলাম রাজ্জাক।
আমিরে জামায়াত বলেন, বিগত সাড়ে ১৭ বছরে এ জাতিকে অনেক জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া সব
মানুষই জুলুমের শিকার হয়েছেন। ২৮ অক্টোবরের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সেদিন লগি-বৈঠা দিয়ে গণতন্ত্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে জবাই করা হয়েছিল। সেদিনই এ দেশ পথ হারিয়ে ছিল। সেদিন তারা লাশের ওপর উঠে নেচেছিল। লাশ চুরি করতে চেয়েছিল। ২৮ অক্টোবর যাদের খুন করা হয়েছে, তারা কারো ওপর ঢিল ছোড়েনি। তাদের অপরাধ ছিল- তারা জামায়াতে ইসলামীর সভায় যোগ দিয়েছিল। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর পর আবার ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এদেশ পথ ফিরে পেয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর এক সাজানো নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে একটি দল। এখন দলের মানুষও তাদের নাম নিতে চায় না। সাড়ে ১৫ বছর দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতায় আসার দুই মাস পরই ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে তারা হত্যা করেছিল। সেদিন তাদের পরিবারকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। লাশ ড্রেনে ভাসিয়ে দিয়েছিল। এটা নিয়ে করা সেনাবাহিনীর তদন্তের রিপোর্ট সেনাবাহিনী ও জানল না, সারা বিশ্বের কেউ জানল না। জেলহাজতে এ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা কয়েদির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সে স্বীকার করে বলেছিল, এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের হাত ছিল।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মের মতো করে যারা আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে সাফ করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন তারা আজ কোথায়। মানুষের সামনে আর মুখ দেখাতেও পারলেন না। আমাদের ওপর সব চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, আমাদের নড়তেও দেয়নি। মাঠে একতরফা খেলানো হয়েছে। শাহবাগে আসর বসানো হয়েছে। সেই আসরে আজেবাজে জিনিসও সাপ্লাই হয়েছে। কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থের জোগান দেওয়া হয়েছে। সংসদ থেকে একজন বলেছিলেন আমার শরীর সংসদে, কিন্তু মনটা পড়ে আছে শাহবাগে।
দুঃখজনকভাবে দুয়েকজন আলেম সেদিন এ অপকর্মের সঙ্গী হয়েছিলেন উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এরা জ্ঞানী নয় জ্ঞানপাপী। তাদের মানুষ ভুলে যাবে না, তাদের প্রাপ্য তারা পাবেন। হেফাজত ইসলামের মতো অরাজনৈতিক একটি দলের ওপর ক্র্যাকডাউন চালানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদিন কতজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, তা আজও মানুষ জানে না। একবার তারা বলল ১৮ জন, আবার বলল কেউ মারা যায়নি। তিনি বলেন, সম্প্রতি আন্দোলনের বিজয়ের চার দিন আগে তাদের একজন বলল বেশি বাড়াবাড়ি করলে ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো করা হবে। এ বক্তব্যের পর এক সপ্তাহও তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। যাদের বলেছিলেন, তারা তো আছে। আপনারা এখন কোথায়। মানুষের সামনে আর মুখ দেখাতে পারলেন না। গর্ব অহংকার করবেন না। এরকমটা আল্লাহ পছন্দ করেন না।
আমিরে জামায়াত বলেন, ‘ছাত্রলীগ নামে হাতুড়ি-হেলমেট বাহিনী তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদেররা অহঙ্কার ও অন্যায় নিয়ে গর্ব করতেন। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। মানুষকে মানুষ মনে করতেন না। আজ তারা কোথায় গেলেন। প্রতিটি অপকর্মের ফল তাদের পেতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী কোনো প্রতিশোধ নেবে না, তবে জুলুমের শিকার প্রতিটি মানুষকে ন্যায়বিচার দেবে। বিপ্লবের পর জামায়াতকর্মীরা চাঁদাবাজি কিংবা দখল করেনি। বরং মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’ সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়তে চান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
দীর্ঘ ১৯ বছর পর প্রকাশ্যে বড় পরিসরে রুকন সম্মেলন করেছে ঢাকা উত্তর মহানগরী জামায়াতে ইসলামী। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী দল। এদের চেয়ে বড় সন্ত্রাসী আর কেউ ছিল না। শুধু ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের বিচার নয়, এ পর্যন্ত সব হত্যার বিচার করতে হবে।’ সম্মেলনে মহানগরীর ১০ হাজার রুকন সদস্যের গোপন ভোটে নির্বাচন করা হবে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির। দিনব্যাপী সম্মেলন কয়েকটি সেশনে ভাগ করা হয়েছে। তবে দলীয় নিয়ম অনুযায়ী, কেউ আমির পদে নিজে থেকে প্রার্থী হবেন না। সর্বশেষ ২০০৫ সালে পল্টন ময়দানে বড় পরিসরে অভিন্ন ঢাকা মহানগরের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রুকন সম্মেলনে বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আবদুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগরী উত্তর শিবির সভাপতি আনিসুর রহমান, পশ্চিমের সভাপতি সালাহ মাহমুদ প্রমুখ।
"