নিজস্ব প্রতিবেদক
নবমীর পর দশমী একই দিনে সম্পন্ন
আজ প্রতিমা বিসর্জন
আজ প্রতিমা বিসর্জন। গতকাল শনিবারই ছিল দুর্গাপূজার নবমী এবং দশমী। একই দিনে তিথি হওয়ায় নবমীর পূজার পর দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সঙ্গে বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় উৎসবের ইতি হয়েছে গতকালই। আজ রবিবার শুধু প্রতিমা বিসর্জন।
এরই মধ্যে মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। আর সেজন্য ভক্তদের মধ্যে আছে বিষাদের ছায়া। মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল মায়ের বিদায়ের আয়োজন। হরষে বিষাদে দেবী দুর্গাকে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভক্তরা। এর মধ্য দিয়েই শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার। শনিবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেখা যায় ঢাকের বাদ্যির সঙ্গে মন্ত্রপাঠে আনন্দময়ীকে অঞ্জলী দিচ্ছেন ভক্তরা। এবার তিথির কারণে মহানবমী পূজার পরই দশমীর বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সনাতন ধর্মমতে, নবমীর পুণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিশ্বে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। নবমী
তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। তিথি অনুযায়ী সন্ধিপূজা আয়োজিত হয় গত শুক্রবার। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। এ সময় মূলত দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়। এ সময়েই দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিল মহিষাসুর, আর রাম বধ করেছিলেন রাবণকে। এদিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পরের দিন শুধু বিসর্জনের পর্ব। নবমীর রাতে উৎসবের রাত শেষ হয়। আর দশমী রাতে মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে। তবে এ বছর একই দিনে তিথি হওয়ায় নবমী এবং দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার সকালে।
মহানবমী তিথিতে বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর দুর্গার আরাধনা করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এদিন সকাল ৬টা থেকে হয় নবমী বিহিত পূজা। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে দেওয়া হয় আহুতি। গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল ৮টা ২৬ মিনিটে শুরু হয় নবমী পূজা। সকালে ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পূজায় অঞ্জলি নিতে হাজির হন ভক্তরা। ভারী বর্ষণের মধ্যে অনেককেই যানবাহনের জন্য দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে ঠিক সময়ে মণ্ডপেও পৌঁছাতে পারেননি। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভোর থেকেই নবমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী।
এবার তিথি অনুযায়ী, নবমী পূজা সকাল ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ করার নিয়ম ছিল। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে নবমী পূজা শেষ করে ৮টা ৫০ মিনিটে ভক্তরা দেবীকে অঞ্জলি প্রদান করেন। পরে শুরু হয় দশমীর বিহিত পূজা। প্রণব চক্রবর্তী আরো জানান, দশমীর তিথি রবিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত। যেহেতু দিনের বেলা দশমীর বিহিত পূজা করতে হয়, সেজন্য নবমীর পূজার পরেই দশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা দিতে আসা মল্লিক চক্রবর্তী বলেন, আমাদের সব কষ্ট দূর করে তিনি (দেবী দুর্গা) চলে যাবেন। এক বছর পর মা আবার আসবেন। আগামী বছর আবার আমাদের মাঝে এসে শান্তি বিলিয়ে দিয়ে যাবেন এ কামনা করি। দশমীর আরো আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আছে সিঁদুর খেলা, মাকে মিষ্টি দান এবং এরপর প্রতিমা বিসর্জন। তবে পূজা উদযাপন পরিষদ বলছে, শনিবার দশমী পূজা হয়ে গেলেও রবিবারে করা হবে প্রতিমা বিসর্জনসহ বাকি আনুষ্ঠানিকতা।
সিঁদুর খেলে দুর্গা মাকে রঙিন মুখে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিবাহিত নারীরা। দুর্গাপূজায় সর্বশেষ রীতিটি হচ্ছে ‘দেবী বরণ’। এটি শুরু হয় বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মাধ্যমে। বিবাহিত নারীরা সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে-অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। তারা এই সিঁদুর মাখিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানান। দুর্গাকে নিয়ে যাওয়ার আগে সিঁথিতে সিঁদুর মাখানোর পর আঙুলে লেগে থাকা বাকি সিঁদুরটুকু তারা একে-অপরের মুখে মাখেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই এ সিঁদুর খেলা। তাই মাকে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে-অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে মিষ্টিমুখ করেন, নাচ-গান করেন। আর প্রত্যাশা করেন, সারাটা বছর যেন এমন আনন্দেই কাটে। বিবাহিত নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান।
দুর্গা আগামী বছর আবার সঙ্গে করে শাঁখা-সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন এবং সেই শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে এ বিশ্বাসে ভক্তরা সিঁদুর নিয়ে দশমী উদযাপন করেন। এ উৎসবের নামই সিঁদুর খেলা। এ সিঁদুর খেলা বিবাহিত নারীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও সবাই মণ্ডপে ভিড় করেন নেচে গেয়ে এতে অংশ নেন। অবিবাহিতরা গালে আর হাতে মাখেন সিঁদুর। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবী দুর্গা। তার এ ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। মহালয়ার মধ্য দিয়ে ২ অক্টোবর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। এরপর গত বুধবার ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, রবিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আয়োজন।
মাঝে বৃহস্পতিবার নবপত্রিকায় প্রবেশ ও স্থাপনে হয় মহাসপ্তমী। পরদিন শুক্রবার সকালে কুমারী পূজার পাশাপাশি মহাষ্টমীর বিহিত পূজা এবং সন্ধিপূজা হয়। দশমীর দিন দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের নিয়ম থাকলেও এবার সেটি না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রণব চক্রবর্তী বলেন, ‘দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের নিয়ম থাকলেও আরেকটি নিয়ম আছে। ওই দিনের মধ্যে যদি শ্রবণা নক্ষত্রের শেষ প্রাত হয়, তাহলে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে। কিন্তু আজকে শ্রবণা নক্ষত্রের শেষ প্রাত হচ্ছে অনেক রাতে। ফলে রাতে তো বিসর্জন দেওয়া যাবে না। এজন্য কাল (আজ) বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। তবে দশমীর যে পূজা, সেটি আজকে দিনেই করা হচ্ছে।’
"