আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের এক বছর
নিহত ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি, আহত ৯৭ হাজার * হামলা বন্ধের দাবিতে শহরে শহরে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হলো গতকাল রবিবার। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এই যুদ্ধে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পুরো গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে বিরাণভূমিতে, নিহত হয়েছে ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি। বছরপূর্তির দিনে গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোয় বিক্ষোভণ্ডমিছিল করছে যুদ্ধবিরোধীরা। খবর আল-জাজিরা ও বিবিসির। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার নামে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকা জুড়ে নির্বিচার বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
টানা এক বছরে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছে ৪১ হাজার ৮৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে আরো ৯৭ হাজার। হতাহতদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বোমায় গাজা উপত্যকার ৯০ ভাগের বেশি ঘরবাড়ি, স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামলা থেকে রেহাই পায়নি মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল, এমনকি আশ্রয়শিবিরও।
ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে গাজার ১৯ লাখের বেশি বাসিন্দা। যারা জীবিত রয়েছে, তারা খাদ্য-পানি ও চিকিৎসার অভাবে ভুগছে অপুষ্টিতে, কলেরাসহ বিভিন্ন রোগে।
গাজায় হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। গাজায় সংঘাতের এক বছর পূর্তির দিনে প্যারিস থেকে নিউইয়র্ক এবং তেহরান থেকে কেপটাউন বিশ্বের শত শত শহরে বিক্ষোভ করছেন যুদ্ধবিরোধীরা।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এক বছর উপলক্ষে একটি ভিডিও বিবৃতি প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
গাজায় হামাসের হাতে ইসরায়েলি জিম্মিদের ‘নিঃশর্ত মুক্তির’ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ৭ অক্টোবরের হামলা আমাদের আত্মাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে।
সব জিম্মির অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানিয়ে গুতেরেস বলেন, ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে গাজায় শুরু হওয়া মর্মান্তিক সহিংসতা ও রক্তপাত এবং এখন লেবাননে গভীর মানবিক দুর্ভোগ অব্যাহত রেখেছে।
গুতেরেস বলেন, জিম্মিদের এখনই মুক্তির সময়, যুদ্ধবিরতির সময়, মধ্যপ্রাচ্যকে গ্রাস করা দুর্ভোগ বন্ধ করার সময়, শান্তি, আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের সময়।
বিধ্বস্ত হাজারো মসজিদ, বাদ যায়নি গির্জা-কবরস্থানও : এক বছর ধরে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৭৯ শতাংশ ধর্মীয় কাঠামো ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানায়, এসব হামলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৪৫টি মসজিদের মধ্যে ৮১৪টি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ১৪৮টি মসজিদ।
এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী মসজিদের অধীনে থাকা ১১টি প্রশাসনিক ও শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান, তিনটি গির্জা এবং ৬০টি কবরস্থানের মধ্যে ১৯টিতেও হামলা চালিয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ২৩৮ জন কর্মচারী নিহত এবং ১৯ জনকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এসব হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গাজার ধর্ম মন্ত্রণালয়। ধর্মীয় স্থাপনার ওপর হামলা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশ্বনেতা ও ইসলামিক সংস্থাগুলোর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তারা।
মসজিদে ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত ২৪ : ফিলিস্তিনের মধ্য গাজায় একটি মসজিদে ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত এবং কয়েক ডজন লোক আহত হয়েছে। গতকাল ভোরে ইসরায়েলি বাহিনী দেইর আল-বালাহ শহরের ওই মসজিদে বোমা হামলা চালায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দেইর আল-বালাহ শহরে অবস্থিত ‘শাহাদা আল-আকসা মসজিদে’ বোমা হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরো ৯৩ জন।
গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মসজিদটিতে অনেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল। আর তাদের ওপরই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বোমা হামলা করেছে।
হামলার পরের ফুটেজে দেখা গেছে, উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃতদেহ বের করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকের লাশ চাপা পড়ে রয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, মসজিদটি হামাসের কমান্ড সেন্টার ছিল। বোমা হামলার আগে বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এক এক্স পোস্টে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, মসজিদটি হামাসের ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল কমপ্লেক্স’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
"