রাহাত চৌধুরী, জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৭ সমন্বয়কের পদত্যাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৭ জন সমন্বয়ক একযোগে পদত্যাগ করেছেন। প্ল্যাটফর্মের কতিপয় সমন্বয়কের বিতর্কিত কার্যক্রম ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা এবং সরকারি দলের মতো আচরণ ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বিরুদ্ধ কাজকেই পদত্যাগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পদত্যাগকৃতরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় জানান তারা।
পদত্যাগকৃতরা সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা হলেন- আবদুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, জাহিদুল ইসলাম, ফাহমিদা ফাইজা, রোকাইয়া জান্নাত ঝলক, মিশু খাতুন, রাফিদ হাসান রাজন, হাসানুর রহমান সুমন, আবদুল হাই স্বপন, নাসিম আল তারিক, ঐন্দ্রিলা মজুমদার, জিয়া উদ্দিন আয়ান, তানজিম আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি ও সাইদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, ৯ দফার ওপর ভিত্তি করে কোটা সংস্কার আন্দোলন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, ৯ দফার অন্তর্ভুক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক প্রকার নিশ্চুপ রয়েছে। প্ল্যাটফর্মটি বর্তমানে একটি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের মতো ভূমিকা পালন করছে। তদুপরি, বাংলাদেশের সর্বস্তরের আন্দোলনকারীদের একই ব্যানারে অন্তর্ভুক্ত করতে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে জাবির কতিপয় সমন্বয়কের অক্ষমতা, সহযোদ্ধাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী শামীম মোল্লার গণধোলাই ও পরবর্তীতে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে কমিটির একাধিক সমন্বয়কের নাম ওঠে আসলেও প্ল্যাটফর্ম থেকে কোনো ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসতে না পারায় সমন্বয়ক পর্ষদের ১৭ জন পদত্যাগ করেছেন বলে জানান তারা।
এর আগে, গত ১৩ জুলাই ৪১ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয়ক কমিটি গঠন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সরকার পতনের পর ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন সমন্বয়ক মাহফুজুল ইসলাম মেঘ। এ ছাড়া গণপিটুনিতে জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় সমন্বয়ক আহসান লাবীব ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানোর অভিযোগে সমন্বয়ক নাজমুল ইসলাম লিমনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি সমন্বয়কদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সামনে আসে। এ ছাড়া গত বুধবার সমন্বয়ক হাসিব জামান ফেসবুক পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দিলে প্ল্যাটফর্মে ভাঙনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
এদিকে, পদত্যাগ করলেও সবসময় সাধারণ ছাত্রদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন পদত্যাগকৃতরা। তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবদুর রশিদ জিতু বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা সবসময় পাশে থাকব। যেকোনো নৈতিক অধিকার আদায়ে আমাদের চেষ্টা সব সময় চলমান থাকবে।’
নতুন কোনো প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিব জামান বলেন, ‘আমরা আপাতত নতুন কোনো প্ল্যাটফর্ম গঠন করছি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে যেকোনো সময়েই নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠন করব।’ এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জাবি কমিটির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে বসা ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তারা আমাদের ওপর অভিযোগ এনেছে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়।’
"