নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দেয়নি ভারত
পাসপোর্ট ফেরত
প্রায় ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন। ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। তারা জানিয়েছে, আপৎকালীন এবং চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো ভিসা এখন দেওয়া হবে না। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিবাদ এবং হুমকিমূলক ই-মেইল দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। গত রবিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং দ্য প্রিন্ট।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা পরিষেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকায়, পাসপোর্টগুলো ভারতীয় হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে ছিল। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপৎকালীন এবং চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া আপাতত বাংলাদেশি নাগরিকদের অন্য কোনো ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বর্তমানে শুধু সীমিতসংখ্যক জরুরি ভিসার আবেদনগুলো প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ভিসা আবেদনও অন্তভুক্ত রয়েছে, যেমন মেডিকেল ইমার্জেন্সি, স্টুডেন্ট ভিসা এবং তৃতীয় দেশে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ডাবল-এন্ট্রি ভিসা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণে দেশজুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো অনেকাংশে বন্ধ ছিল, ফলে অনেক আবেদনকারীর পাসপোর্ট ঢাকার হাইকমিশনের কাছে থেকে যায়। আর এর কারণে হতাশাগ্রস্ত আবেদনকারীদের অনেকেই ব্যাপকভাবে হাইকমিশনে ই-মেইল করছেন; এমনকি কিছু ই-মেইলে ভাঙচুরের হুমকিও রয়েছে। প্রতিবেদনগুলোয় ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, ভিসা আবেদন কেন্দ্রের সদস্যরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমগুলো জনগণের অসন্তোষ প্রকাশের স্থানে পরিণত হয়েছে। ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অভিযোগ জানানোর সময় প্রায়ই হাইকমিশনকে ট্যাগ করছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ভারতে বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভ্রমণে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে বাংলাদেশের। শুধু ২০২৩ সালে প্রায় ১৬ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা ইস্যু করেছিল ভারত, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ভিসা ইস্যু হয়েছিল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে ভারতীয় ভিসা দেওয়া কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ রয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের মধ্যে চলমান অস্থিরতা এবং দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে ভারতীয় হাইকমিশন সতর্কতা অবলম্বন করছে। এছাড়া অস্থায়ী ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে হাইকমিশন। এদিকে উভয় দেশের সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে বলেও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আপৎকালীন এবং চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো ভিসা দেবে না ভারত : গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতন ও তার দেশত্যাগ করে ভারতে অবস্থানের পর থেকেই বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা পরিষেবা কার্যত বন্ধ রয়েছে। বেশিরভাগ সময় জরুরি ক্ষেত্রেও ভিসা পেতে বিলম্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের। এ অবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপৎকালীন এবং চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া আপাতত বাংলাদেশি নাগরিকদের অন্য কোনো ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। গত রবিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আপাতত বাংলাদেশিদের চিকিৎসার এবং জরুরি প্রয়োজনে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। যখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তখন পূর্ণমাত্রায় কাজ শুরু হবে এবং ভিসা দেওয়াও স্বাভাবিক হবে।’ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অস্থির পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দেয় ভারত। বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের বহু কর্মীকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তবে কিছুদিন পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠলে পুনরায় ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রগুলো কাজ শুরু হলেও মিলছে না ভিসা পরিষেবা। এ অবস্থায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করে ভিসা না পেয়ে ঢাকার ভারতীয় ভিসা প্রদান কেন্দ্রে বিক্ষোভও দেখান অনেকে। এর জেরে ফের ব্যাহত হয় কাজ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত। ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ভিসা সেন্টার খুলছে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং খুলনায়। তবে এখনই সবাই ভিসা পাবেন না। শুধু যারা চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে চান, তাদেরই জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া হবে অগ্রাধিকার। আপাতত শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হবে।
"