নিজস্ব প্রতিবেদক
টিআইবির বিবৃতি
মৌলবাদীদের সঙ্গে আপসকামিতা উদ্বেগজনক
স্বার্থান্বেষী মৌলবাদীদের হুমকির কাছে অন্তর্বর্তী সরকার আপস করে উদ্বেগজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হুমকির মুখে জাতীয় শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্বেগের কথা জানায় টিআইবি। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্ত ‘নতুন বাংলাদেশ’র স্বপ্ন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিপন্থি ও অন্তর্বর্তী সরকারের আপসকামী আচরণের পরিচায়ক।
উদ্বেগ জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কর্তৃত্ববাদী সরকারের বহুমাত্রিক ও নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ছাত্র-জনতা এমন ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ সব বৈচিত্র্য ও মতাদর্শের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে। নতুন বাংলাদেশ বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও সুশাসিত হবে, যেখানে ধর্মীয় বা অন্য কোনো মতাদর্শ কারো ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কিন্তু আমরা আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ করছি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বহুত্বের বিরুদ্ধে কুৎসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ছড়িয়ে শঙ্কা ও হুমকির বাতাবরণ সৃষ্টির প্রচেষ্টা ক্রমেই উৎকট রূপ ধারণ করছে। এ ধরনের স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার, হুমকির প্রতি নতি স্বীকার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আপস করছে। যার উদ্বেগজনক উদাহরণ হলো পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন সমন্বয় কমিটি বাতিলের ঘটনা। বিষয়টি একদিকে যেমন সরকারের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে আপসের উদাহরণ; অন্যদিকে তেমনি ‘নতুন বাংলাদেশ’র বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার প্রতি রীতিমতো প্রহসন।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদের ধ্বংসস্তূপ থেকে উত্থিত অশুভ জবরদখলকারী সাম্প্রদায়িক মহল যতই অতি ক্ষমতায়িত আচরণ করুক, তাদের বৈষম্যমূলক আদর্শকে সমাজের ওপর বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার যত অপচেষ্টাই করুক, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূলধারা কোনোভাবেই এ ধরনের সাম্প্রদায়িক শক্তির বিকাশ ঘটতে দেবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতার মূল ভিত্তি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূলধারার বহুমত, অন্তর্ভুক্তি, সমঅধিকার ও অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ। যার প্রতি অটুট থেকে সরকার তার ওপর অর্পিত রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হবে এবং সকল প্রকার অশুভ শক্তি; বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীমহলের সঙ্গে আপসের পথ দৃঢ়ভাবে পরিহার করবে বলে আশা প্রকাশ করছে টিআইবি।’
"