নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ অক্টোবর, ২০২৪

ডিসি নিয়োগে সচিবালয়ে হট্টগোলে শাস্তি পাচ্ছেন ১৭ উপসচিব

জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ ইস্যুতে সচিবালয়ে হট্টগোলের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ১৭ উপসচিবের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে। কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনে ৮ জনকে গুরুদণ্ড, ৪ জনকে লঘুদণ্ড এবং ৫ জনকে তিরস্কারের সুপারিশ করা হয়। গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে কমিটির সুপারিশ তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ডিসি নিয়োগ নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৭ জনকে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগ দিয়ে জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেন নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা কর্মকর্তারা। তার আগে অন্তর্বর্তী সরকার গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের ২৫ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেয়। এর এক দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর আরো ৩৪ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৫৯ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে যারা ডিসি হতে পারেননি, তারা এ দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে পরদিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হট্টগোল করেছিলেন। দিনভর বিক্ষোভের পর ওইদিন সন্ধ্যায় তারা দেখা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে। সেদিনও প্রজ্ঞাপন দুটি বাতিলের আশ্বাস পেয়ে তারা চলে যান।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন দুটি পুরোপুরি বাতিল না করে আট জেলায় নতুন ডিসির নিয়োগ বাতিল করে। এছাড়া চার ডিসির জেলা পরিবর্তন করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ আদেশে সন্তুষ্ট হতে পারেননি নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা এবং ডিসি হতে আগ্রহী কর্মকর্তারা। সেদিন তারা আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা কোনো অন্যায় কিছু করেননি। দীর্ঘদিন তারা পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন। পুরোনো ফিডলিস্ট বাতিল করে ডিসি নিয়োগের জন্য তাদের মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, পুরোনো ফিডলিস্ট ধরেই ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে। এটা অগ্রহণযোগ্য মনে হওয়ায় আমাদের দাবি জনপ্রশাসন সচিবকে জানানো হয়েছে। তবে কমিটি যেহেতু শাস্তির সুপারিশ করেছে, এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ডিসি নিয়োগে ৩ কোটি টাকার চেক খবরটি ভিত্তিহীন : দেশের জাতীয় একটি দৈনিকে ‘৩ কোটি টাকার বিনিময়ে ডিসি নিয়োগ’ শিরোনামে একটি খবর ছাপা হয়। এ নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় দেশজুড়ে। নড়েচড়ে বসে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশাসনিক ইমেজ ও ডিসি নিয়োগের স্বচ্ছতা নিরূপণে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে তলব করে খবরের সত্যতা জানতে চাওয়া হলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। এমনকি কমিটিও তিন কোটি টাকার বিনিময়ে ডিসি নিয়োগের বিষয়ে সত্যতা পায়নি। জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান, যে ব্যবসায়ী ৩ কোটি টাকার চেক দিয়েছিলেন তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। ব্যালেন্স জিরো পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে তিনি পদ্মা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুললেও তা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এমনকি তার দেওয়া ঠিকানাটি সঠিক নয়। বর্তমানে ওই ব্যক্তির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি, আগামীতে সঠিক তথ্য ব্যতিরেকে কোনো অ্যাকাউন্ট খোলা না হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

এক সিনিয়র সচিবসহ দুই সচিবকে ওএসডি : একজন সিনিয়র সচিবসহ দুই সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা হলেন- সুরক্ষাসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মশিউর রহমান ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখ। গতকাল সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) ড. এ কে এম মতিউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) গৌতম চন্দ্র পালসহ ৬ অতিরিক্ত সচিবকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করেছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বাকি ৫ কর্মকর্তা হলেন- বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোশাররফ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম শামীম আক্তার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবের রহমান।

পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষে নতুন মহাপরিচালক : এদিকে বাংলাদেশ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ পদে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবদুর রহিম খানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এতে সই করেন সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মামুন শিবলী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close