বাসস
জাপানি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার
দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচনের সংকল্প ড. ইউনূসের
‘রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসবে অন্তর্বর্তী সরকার’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
প্রফেসর ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টোকিওভিত্তিক নিউজ আউটলেট এনএইচকে ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
ড. ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরের সময় গৃহীত এ সাক্ষাৎকার ভিত্তিক রিপোর্টটি যুক্তরাষ্ট্র সময় গত রবিবার প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশে টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। এ ব্যাংকটি সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের বিনা জামানতে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে থাকে। তিনি ও এ ব্যাংক ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেন। সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করা এবং সরকার প্রস্তুত হলেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।
তিনি বলেন, ‘ব্যর্থতা এমন কিছু নয় যা আমরা মেনে নিতে পারি।’ হাসিনা সরকারের পতনে প্রধান ভূমিকা পালনকারী ছাত্রদের উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, তরুণরা তাদের জীবন দিয়েছে। তিনি এ ঘটনাকে ‘বিপ্লব’ নামে অভিহিত করেছেন।
তিনি নীতিনির্ধারণে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে তার অবস্থানের ইঙ্গিত দেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সংকটময় সময়ে’ বাংলাদেশ তার সবচেয়ে বড় দাতা জাপানের কাছ থেকে সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং সেখানে গণতন্ত্রকে দৃঢ়মূল করতে সহায়তার জন্য জাপানের সহযোগিতা অপরিহার্য।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসবে অন্তর্বর্তী সরকার : রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ছয়টি কমিটির কার্যক্রম শুরুর আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ সফর পরবর্তী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমের জন্য ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব কমিটি কাজও শুরু করেছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এসব কমিটির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগেই আলোচনায় বসা দরকার। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের স্টেকহোল্ডার।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারে তাদের থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। প্রশ্নোত্তর পর্বে শফিকুল আলম বলেন, সংস্কার কমিশনের কাজ দ্রুতই শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পেছানো হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারও আলোচনা শুরু হবে। আলোচনা শেষে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আসন্ন আলোচনায় আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে।
সরকারের সময়সীমার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সেক্রেটারি বলেন, এটি বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, তিনি এক কথার মানুষ। তিনি সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। তিনি রাষ্ট্র মেরামতের এ সুযোগকে মহৎ একটি কাজ হিসেবে বিবেচনা করছেন এবং এটিকে তিনি সফল জায়গায় নিয়ে যেতে চান।
আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক সমর্থনের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কার কমিশনগুলোকে বিশ্বনেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতিসংঘে সফরের সময় তার সরকারকে বিশ্বনেতারা সমর্থন জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
"