নিজস্ব প্রতিবেদক
চাকরির বয়সসীমা নির্ধারণে উচ্চক্ষমতার কমিটি
চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ টিয়ার শেল সাউন্ড গ্রেনেড * প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবিতে গতকাল সোমবার বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীসহ চাকরিপ্রার্থীরা। বিক্ষোভকারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে জমায়েত হলে পুলিশ মারমুখী হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভরতদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। অন্তত ১৩ জনকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।
এদিকে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বয়সসীমা নিয়ে পরামর্শ চেয়ে একটি ‘উচ্চক্ষমতার’ কমিটি গঠন করেছে সরকার। এ কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা এখন ৩০ বছর। এটি ৩৫ করার দাবিতে কয়েক বছর ধরেই নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীসহ চাকরিপ্রার্থীরা। ‘চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ’র ব্যানারে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দাবির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া নেয়নি, বরং না একাধিকবার নাকচ করে দিয়েছে। ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের তিন দিন পর নোবেল বিজয়ী পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে নানা দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন-বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যে মাঠে নামে বয়সসীমা নিয়ে আন্দোলনকারীরাও।
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে গতকাল দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। শাহবাগে অবস্থানের পর তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ চান। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি নন আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সরেজমিন দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান করছেন। পাঁচ শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশী রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেন। তাদের কেউ কেউ নানা স্লোগান দেন। অনেক চাকরিপ্রত্যাশী রাস্তায় শুয়ে পড়েন।
আন্দোলনের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা শরিফুল ইসলাম শুভ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে জমায়েত হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে সেখান থেকে ১৩ জনকে পুলিশ আটক করেছে। অন্তত ৩০ জনের মতো আহত হয়েছেন। আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।’ পুলিশের ভাষ্য, গত ২৫ আগস্ট এক নির্দেশনায় পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের সামনে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ বা বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ কারণেই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে আগেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুলিশের নিষেধ অমান্য করে প্রধান উপদেষ্টার বাসার সামনে যায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
চাকরিতে বয়সসীমা নির্ধারণে কমিটি গঠন : সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে নানা কর্মসূচির মধ্যে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ নিতে একটি ‘উচ্চক্ষমতার’ কমিটি গঠন করেছে সরকার। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ ও পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার মধ্যে এ সিদ্ধান্ত এলো। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে, যিনি সচিব ছিলেন, অবসরে গেছেন। ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন।
এ বিষয়ে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, বিষয়টিকে অতি গুরুত্ব (টপ প্রায়োরিটি) দেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরিতে বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে যে নানাভাবে আন্দোলন, এ আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটা কমিটি করা হয়েছে। কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়ে সার্বিক পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবে। তিনি জানান, এ কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। কমিটির আহ্বায়ককে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে কয়েকজন সদস্য দরকার, উনি নেবেন। সাত দিনের মধ্যে এ কমিটি সরকারকে পরামর্শ দেবে বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে। আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বল প্রয়োগ এবং তাদের দাবিকে কীভাবে দেখছেন- এ প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, সরকার তো কমিটির অংশ। এটি উচ্চক্ষমতার কমিটি। এ কমিটির অর্থ কোনো আশ্বাস নয়, ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ।
"