ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাকিবকে রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান
সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিদায়ি টেস্ট খেলার আশা তার। তবে বিদায়ি টেস্টে খেলোয়াড় হিসেবে সাকিবকে নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারে এমপি হওয়া সাকিবকে নিয়ে জনগণের ক্ষোভ থাকলে সেটির নিশ্চয়তা দিতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। আর সে কারণে সাকিবকে রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসানের দুটি পরিচয়। এটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। একটা খেলোয়াড় পরিচয় অন্যটা রাজনৈতিক। মানুষের মধ্যে এ দুটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে।’
আসিফ মাহমুদ যোগ করেন, ‘একজন খেলোয়াড় হিসেবে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়া দরকার, (সাকিব) দেশে এলে আমরা সেটা দেব। কিন্তু তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জণগণের মধ্যে যদি ক্ষোভ থাকে, তাহলে কী হবে’ ক্রীড়া উপদেষ্টার কথাতে বোঝা যাচ্ছে, সাকিব যেভাবে চাইছেন সেভাবে হয়তো নিরাপত্তা পাবেন না তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় ক্রীড়া ও যুব উপদেষ্টা বলেছেন, ‘মনে করুন আমার নিরাপত্তায় পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন গানম্যান থাকেন। আমার ওপর যদি ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটি ক্ষোভ থাকে তাহলে পাঁচণ্ডছয়জন আমাকে কী নিরাপত্তা দেবে? সেক্ষেত্রে আমারও নিরাপদ থাকার সুযোগ নেই।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের প্রসঙ্গটিও সামনে এনেছেন আসিফ মাহমুদ, ‘জনগণের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে সেটির নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। শেখ হাসিনাকেও দেওয়া যায়নি, দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।’ গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা।
পরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। ভেঙে যাওয়া সংসদের একজন সদস্য ছিলেন সাকিব। এ বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সরকার পতনের সময় কানাডায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলছিলেন সাকিব।
সাকিবের বিরুদ্ধে গার্মেন্টকর্মী রুবেল হত্যা মামলা হয়েছে। হত্যা মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে শেয়ারবাজার কারসাজির অভিযোগে সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করা হয়।
মাঠের বাইরের এসব ঘটনায় চাপের মুখে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানান সাকিব। তার আশা ঘরের মাঠে বিদায়ি টেস্ট খেলার। এ জন্য দেশে ফিরতে শর্ত ছুড়ে দেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, সাকিবকে নিরাপত্তা দিতে অপারগ তারা; বিষয়টি আসতে হবে সরকারের তরফ থেকে।
অবশেষে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছে সরকার। কিন্তু ক্রীড়া ও যুব উপদেষ্টার নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি ঝরেছে তাতে সাকিবের ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল না। কারণ, সাকিব ‘সেফ এক্সিট’ চেয়েছেন। এই বিষয়টিই এড়িয়ে গেছে তার ভাষ্যে। উল্লেখ্য, কার্যত সাকিব আছেন কাণপুরে। সেখানে ভারতের বিপক্ষে একাদশে আছেন তিনি। দেশে ফেরা না হলে কাণপুরেই ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলছেন সাকিব।
"