গাজীপুর ও সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
আশুলিয়ায় এখনো ১৬ কারখানা বন্ধ
ঢাকার সাভারের শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ১৬টি পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কয়েকটিতে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। তবে বাকি সব কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল শনিবার সকালে শিল্পাঞ্চল ঘুরে এ তথ্য জানা যায়। এদিকে গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা (পলাশ টেক) এলাকায় সকালে কাজে গিয়ে শ্রমিকরা দেখতে পান, গেটে কারখানা বন্ধের নোটিস ঝুলছে।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে ডিইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। তবে বকেয়া বেতনসহ আরো কিছু সমস্যার কারণে ১৬টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। যার মধ্যে ১০টি রয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। বাকি ৬টি কারখানায় রয়েছে সাধারণ ছুটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোটা শিল্পাঞ্চলে নিয়োজিত আছেন র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে, আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকায় লুসাকা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা অন্য কারখানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করলে ওই এলাকার চারটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মন্ডল নিট ও ম্যাংগো ট্যাক্সের শ্রমিকরা আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সড়কটিতে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আলোচনার পর শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন। সড়কটিতে স্বাভাবিক হয় যানচলাচল।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শনিবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের প্রায় সব কারখানায়ই উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। তবে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় ১০টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। এছাড়া আরও ৬টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে এসব কারখানা বন্ধ। মন্ডল নিট ও ম্যাংগো ট্যাক্সের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছিলেন। তবে এখন পরিস্থিতি ভালো।
গাজীপুরে বিক্ষোভ : অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা কারখানা খুলে দেওয়া এবং তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে এইচ আর ওয়ান ফ্যাশন লিমিটেড এবং এইচ আর ওয়ান অ্যাক্সেসরিজ কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। পরে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বোঝালে তারা মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা (পলাশ টেক) এলাকায় শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
শ্রমিকরা জানান, শনিবার সকালে তারা কাজে এসে দেখতে পান, গেটে বন্ধের নোটিশ। তাদের ৩ মাসের বকেয়া বেতন না দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণার নোটিস টানিয়ে দেয়। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, মালিকপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
তারা আরো জানান, তিন মাসের বেতন বকেয়া থাকায় তাদের ঘরভাড়া, দোকান বাকি, বাচ্চাদের স্কুলের বেতন, প্রাইভেট শিক্ষকের বেতনসহ অনেক ধারদেনা রয়েছে। হঠাৎ কারখানা বন্ধের নোটিস দেখে তারা মহাসড়কে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন। শ্রমিকরা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমরা কাজ করেছি। শুক্রবার থাকায় কারখানা সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। শুনেছি শুক্রবার রাতে মালিক কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে চলে গেছে। আমাদের মধ্যে অনেক শ্রমিক রয়েছেন যারা ৪ মাসও বেতন পাচ্ছিলেন না। শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রেখে মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।’
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ফারুক বলেন, ‘শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ করার খবরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের বোঝালে তারা সড়ক ছেড়ে কারখানার সামনে অবস্থান নেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এইচ আর ওয়ান ফ্যাশন লিমিটেড এবং এইচ আর ওয়ান অ্যাক্সেসরিজ কারখানার মালিকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
"