নিজস্ব প্রতিবেদক
মুরগি-ডিমের দাম আরো বাড়তি
রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ খুচরা বাজারে গত বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৮০ টাকা কেজি দরে। এক দিনের ব্যবধানে গতকাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে তা বিক্রি হয় ১৯০ টাকায়। একই সঙ্গে বাড়তি দামে বিক্রি হয় ডিমও। অথচ এই দুই পণ্যের দামই নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। যার কোনোটিই বিক্রি হচ্ছে না বেঁধে দেওয়া সেই দামে। গতকাল রাজধানীর আজমপুর কাঁচাবাজারে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাজারের সব দোকানেই একচেটিয়া ব্রয়লার মুরগির দাম চাওয়া হয় ১৯০ টাকা কেজি। এ ছাড়া সোনালি মুরগি ২৫০-২৬০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০-৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
ব্রয়লার মুরগির দাম এক দিনের ব্যবধানে ১০ টাকা কীভাবে বাড়ল এই প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতারা বলেন, পাইকারিভাবেই দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কেনা সম্ভব হলে সেটি খুচরা বাজারে প্রয়োগ করা সম্ভব হতো। কিন্তু পাইকারিতেই বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
চাঁন মিয়া নামের এক বিক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহে ১৭০ টাকা কেজি পাইকারি দামে ব্রয়লার মুরগি কিনেছি। যার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে ১৮০ টাকায় ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে। আর গত বৃহস্পতিবার রাতে ব্রয়লার পাইকারি বাজারে কিনতে হয়েছে ১৭৭ টাকা। অনেকে ১৮০ টাকা কেজিও কিনেছে। যার কারণে ১৯০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
ফখরুল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, কেউ যদি একসঙ্গে অনেক মুরগি নেয় তবে দাম কিছু ছেড়ে দেওয়া সম্ভব। এ ছাড়া দু-একটি মুরগি কিনলে দাম কমানো যাচ্ছে না। এই মুরগি পাইকারি মার্কেট থেকে কেনার পর আবার দোকানে নিয়ে আসার জন্য আলাদা পরিবহন খরচ আছে। সব মিলিয়ে ১০ টাকা ন্যূনতম লাভ না করলে আমাদের চলে না।
অন্যদিকে ডিমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাল ডিম (ফার্ম) বিক্রি হচ্ছে হালি ৫৫-৬০ টাকা। ডজন কিনলে গুনতে হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা। আর এক কেস (৩০টি) কিনলে গুনতে হচ্ছে ৪০০-৪২০ টাকা।
খুচরা দোকানের বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহজুড়েই ডিমের দাম এমন ছিল। বন্যার কারণে বিভিন্ন এলাকার ফার্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার কারণে বাজারে ডিমের দাম বাড়তি। মনে হচ্ছে কমতে কিছুটা সময় লাগবে। এদিকে মুরগি ও ডিমের বাড়তি দামের কারণে ক্রেতারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। বিক্রেতারা যেমন ইচ্ছা তেমন দাম নিচ্ছেন। এগুলো দেখার কেউ নেই।
আজমপুর বাজারে নূরজাহান পারভীন নামের এক ক্রেতা বলেন, বিক্রেতাদের বাহানার শেষ নেই। প্রতিটি জিনিসের দাম অনেক বেশি। সাড়ে ১৩ টাকার বেশি দিয়ে একটি ডিম কিনতে হচ্ছে। আমরা কোথায় যাব? সরকারের উচিত এসব বিষয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং করা। কেননা সাধারণ মানুষ খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
আবদুস সালাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, গত কয়েকদিন আগেও ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি কিনেছি। আর আজকে এই মুরগি ১৯০ টাকা দাম বলছে। এর মধ্যে এমন কি হয়েছে যে, ১০ টাকা দাম বাড়াতে হবে? ডিম আর মুরগির দাম বেঁধে দেওয়ার পর আরো বেশি বেড়েছে।
এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। আর কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
"