বাসস
জলবায়ু পদক্ষেপে বৈশ্বিক কাঠামোর পরিবর্তন চাই
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নিট-শূন্য কার্বন নিঃসরণ ও চরম সম্পদ বৈষম্য দূরীকরণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে জলবায়ু পদক্ষেপের জন্য বৈশ্বিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রধান উপদেষ্টা গত বুধবার নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আলোচনা করতে নিউইয়র্ক টাইমস বুধবার উদ্ভাবক, কর্মী, বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এটি নিউইয়র্ক টাইমস স্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনের রাজনৈতিক ও নীতিগত চ্যালেঞ্জগুলো খোলামেলা আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হয়। মুহাম্মদ ইউনুস জেন গুডাল ও আরজে স্ক্যারিঞ্জ প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস, জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন একটি দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
তার দেশের মতো দেশগুলোর কাছে ধনী দেশগুলোর কী ঋণ রয়েছে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, নিট-শূন্য কার্বন নিঃসরণ ও চরম সম্পদ বৈষম্য দূরীকরণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে জলবায়ু পদক্ষেপের জন্য বৈশ্বিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের ওপর যেসব ধ্বংসের ভার চাপিয়েছেন তা কেন আমরা বহন করব? যেখানে এর ‘কারণ আপনারা। আমরা ফলাফল।’ অন্যদিকে, স্থানীয় সময় বুধবার নিউইয়র্কের একটি হোটেলে শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে এলে তিনি বলেন, তার সরকার দেশে মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠকে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের সময় সংঘটিত নৃশংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার ও জবাবদিহি নিয়ে আলোচনা হয়। মানবাধিকার কর্মকর্তারা স্বৈরশাসকের সময় সম্পাদিত প্রায় ৩ হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অধিকতর তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তারা নিরাপত্তা খাতের সংস্কার, সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার ও নির্বিঘ্নে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং শেখ হাসিনার স্বৈর-শাসনামলে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটক কেন্দ্রের কার্যক্রমের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
রবার্ট এফ কেনেডি মানবাধিকারের সভাপতি কেরি কেনেডি ৯ জন মানবাধিকার কর্মকর্তার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ডও বৈঠকে যোগ দেন। ক্যালামার্ড বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ‘একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানো যে, এটি এক নতুন বাংলাদেশ।’ প্রফেসর ইউনূস কীভাবে পূর্বের স্বৈরাচারী শাসনামলে নাগরিকদের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণ করা হয়েছিল এবং তার সরকার দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এ পর্যন্ত কী করেছে- তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের জন্য তার সরকার পুলিশ সংস্কার সংক্রান্ত একটি কমিশনসহ বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার তার কর্মকাণ্ডের যেকোনো সমালোচনাকে স্বাগত জানাবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী প্রশাসন বাকস্বাধীনতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন। ড. ইউনূস আরো বলেন, ‘এই সরকার কোনো সমালোচনায় বিচলিত নয়। আসলে আমরা সমালোচনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সরকার দেশে কারো কণ্ঠরোধ করবে না।’
হংকং-ভিত্তিক সাবেক মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনারও বৈঠকে বক্তব্য দেন। অন্যদিকে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে আরো সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গেটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক সুজমান সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে তাদের সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গেটস ফাউন্ডেশনকে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে প্রতিষ্ঠানটির সহযোগিতা বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। এতে মার্ক সুজমান ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ দেখান।’ তিনি বলেন, গেটস ফাউন্ডেশন পৃথিবীব্যাপী স্বাস্থ্য খাতে আর্থিক সহায়তা ও দাতব্য কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং আইসিডিডিআরবিতে প্রতিষ্ঠানটি যুক্ত রয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, গেটস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে তাদের সহায়তা বাড়ানোর যে আগ্রহ দেখিয়েছে তার অর্থ হলো- বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি। সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি অন্য খাতে সামাজিক ব্যবসা পরিচালনারও আহ্বান জানান।
"