সাভার (ঢাকা) ও টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
শ্রমিক অসন্তোষ
সংঘর্ষে নারীশ্রমিক নিহত
আশুলিয়ায় ১৯টি পোশাক কারখানা * বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গীতে বিক্ষোভ
সাভারের জিরাবো এলাকায় শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিক নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। অস্থিতরতা কমলেও আশুলিয়ায় এখনো বন্ধ রয়েছে ১৯টি পোশাক কারখানা। এ ছাড়া বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে সাভারের জিরাবো এলাকার মাস্কট পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে রেডিয়েন্ট ও সাউদান পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ জন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় মাস্কট নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার সামনে এ সংঘর্ষ হয়।
নিহত নারী শ্রমিকের নাম রোকেয়া বেগম। তিনি গাইবান্দা জেলার সদর থানার গুদারহাট এলাকার মাসুদ রানার স্ত্রী। রোকেয়া মাস্কট গার্মেন্ট কারখানায় সহকারী সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আহত শ্রমিকদের পরিচয় জানা যায়নি। আশুলিয়া শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকালে শ্রমিকরা কাজ করতে এসে দেখেন মেরামতের জন্য কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরো জানান, মাস্কট গার্মেন্টের কারখানার পাশে আরো দুটি কারখানা আছে। ওই দুই কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে গার্মেন্টের শ্রমিকদের সংঘর্ষ লেগে যায়। এতে এক নারী শ্রমিক গুরুতর আহত হন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে শিল্প-পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হন। এ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী টহল অব্যাহত রয়েছে। নিহত পোশাকশ্রমিকের মরদেহ জিরাবো এলাকার পিএমকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
আশুলিয়ায় এখনো বন্ধ ১৯ পোশাক কারখানা : অস্থিরতা কমেছে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায়। উৎপাদনে ফিরেছে অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা। তবে এখনো খোলেনি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষিত ১৯টি কারখানা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম।
গতকাল মঙ্গলবার শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, ১ হাজার ৮৬৩টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৬৭৯টি কারখানা খুলেছে। চলমান সংকটে বন্ধ রয়েছে ১৮৪টি কারখানা। শিল্পাঞ্চল ঘিরে রয়েছে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, র্যাব বিজিবি ও সেনা সদস্য। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, র্যাব, পুলিশের রায়ট কার ও জলকামান।
জানা গেছে, শিল্পাঞ্চল অস্থিতিশীলতার নেপথ্যে থাকা ইন্ধনদাতাদের বিষয়েও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনীর কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, শ্রম আইনের ১৩-এর ১ ধারায় যেসব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব কারখানার শ্রমিকরা কোনো বেতন পাবেন না।
এদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সকাল সাড়ে ৯ টায় টঙ্গী খাঁ পাড়া এলাকায় মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে সেনাবাহিনীর আশ্বাসে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে মহাসড়ক ছেড়ে দেন শ্রমিকরা। টঙ্গীর খাঁপাড়া সড়কে সিজন ড্রেসেস লিমিটেডের অবস্থান। কারখানায় কাজ করেন ১ হাজার ৬০০ শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানান, কারখানাতে গত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসের শ্রমিকদের বেতন বকেয়া আছে। শ্রমিকরা এক সপ্তাহ ধরে বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করছে না। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ চলছে। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে খাঁপাড়ার এশিয়া পাম্পের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় শ্রমিকদের কর্মসূচি চলছিল। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে আছে।
টঙ্গী পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, এই কারখানায় বেতন নিয়ে মালিকপক্ষ প্রায়ই ঝামেলা করে। এর আগেও কয়েকবার এমন হয়েছে। সকালে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা রাস্তায় নামেন। আমরা শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। পরে সেনাবাহিনীর আশ্বাসে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে আসে তারা।
এ বিষয়ে কারখানার মালিক বাহাউদ্দিন চৌধুরী বাকের বলেন, তিন মাসের নয়, শ্রমিকরা বেতন পাবেন দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট)। ১৫ সেপ্টেম্বর জুলাই মাসের অর্ধেক বেতন দেব বলেছিলাম। শ্রমিকরাও সেটা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংকের টাকা উত্তোলনসংক্রান্ত ঝামেলার কারণে এখনো টাকা দিতে পারিনি। আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেননি। আমি মনে করি, শ্রমিকদের একটি পক্ষ উসকে দিয়ে বিক্ষোভ করাচ্ছে।
"