গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অভিন্ন স্বার্থে বিপরীত আদর্শবাদীরা একাট্টা

প্রশাসনের পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে চলছে নানা রকম বুজরুকি। বিগত ১৫ বছর ধরে বঞ্চিত দলনিরপেক্ষ আমলাদের ভালো পদায়ন আটকাতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতপন্থিরা এক হয়ে কাজ করছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের ক্ষেত্রে এ কাণ্ড ঘটেছে। সদ্য নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের তালিকা ও চাকরির নথি পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে। এক্ষেত্রে বিপরীত আদর্শের এই দুদল এখন মিলেমিশে একাট্টা।

এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার বিগত বছরগুলোতে পদোন্নতি ও পদায়নবঞ্চিত রাখতে তিনটি জেলাকে (সাতক্ষীরা, বগুড়া ও ফেনী) অপ্রকাশ্য কালো তালিকায় রেখে উন্নয়ন বঞ্চিত রেখেছিল। এই তিন জেলার চাকরিজীবীরাও ছিল শ্যেনদৃষ্টিতে। ছিলেন প্রমোশন বঞ্চিত। এবার ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রেও উপেক্ষিত হয়েছে এ জেলাগুলোর আমলারা। এ নিয়েও প্রশাসনে নতুন করে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলের জি হুজুর আমলারা ডিসি হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে প্রশাসনে পুনর্বাসনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে নিয়েছে।

এদিকে বিএনপির সমমনা আমলাদের মাইনাস ফর্মুলায় ফেলতে একটি ইসলামী দলের কর্মীদের কিছু সুবিধার বিনিময়ে দলে ভিড়িয়ে ছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপিমনা এবং দলনিরপেক্ষ আমলাদের ঠেকাতে আওয়ামী লীগের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে এখনকার জামায়াত। এ কথা এখন চাওর রয়েছে সচিবালয়ে। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করেছেন অনেকে।

এরই মধ্যে ডিসি নিয়োগ ইস্যুতে সচিবালয়ে নজিরবিহীন হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়ার পর তুমুল বিতর্কের মুখে গত বুধবার আটজনের নিয়োগ বাতিল হয়েছে। কথা আছে, বিগত সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ করছেন এক উপদেষ্টা। তার ব্যাপারে উষ্মা বাড়ছে জনপ্রশাসনে।

নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের ব্যাপারে জানা গেছে, দলনিরপেক্ষ ও বিএনপিঘেঁষা একজন আমলাকে ডিসি করা না হলেও পুনর্বাসিত হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলারা। জামায়াত সমর্থিত অনেকেই নিয়োগ পেয়েছেন। জামায়াত প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আমলাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

মাগুরার ডিসি করা হয়েছে ফরিদুর রহমানকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ও সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখরের আস্থাভাজন ছিলেন। অনুগত হওয়ার পুরস্কার হিসেবে ডিসি নিয়োগ বাগিয়ে নিয়েছেন এই আমলা।

মানিকগঞ্জের ডিসি ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। সাতক্ষীরার ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মোস্তাক হোসেন। তার দলীয় আদর্শের জায়গা হচ্ছে জামায়াত। রাজউকের পরিচালক কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইসিটি সচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ সংস্কার বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ফার্স্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করা অহিদুল ইসলাম ডিসি হয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সক্রিয় কর্মী হওয়া সত্ত্বেও তার ডিসি হতে সমস্যা হয়নি। জেলা প্রশাসক হোসনে আরার স্বামী ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক এলাকার সভাপতি ছিল। সাইফুল ইসলাম কলকাতায় বাংলাদেশি মিশনে টানা ৮ বছর ফার্স্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পদায়ন পাওয়া মোজাম্মেল হোসেন ও ইসতিয়াক এখন ডিসি হিসেবে নিয়োগ। এ ছাড়া শরিয়তপুরের ডিসি আবদুল আজিজ সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সামসুল আলমের পিএস ছিলেন, নাটোরের ডিসি রাজীব কুমার সরকারের বাবা যতীন কুমার সরকার শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের আশীর্বাদপ্রাপ্ত গাজী টিভির সংবাদ পাঠিকা ২৪ ব্যাচের ফারহানা ইসলাম হয়েছেন কুষ্টিয়ার ডিসি।

তানভীর আহমেদ ঢাকার ডিসির ভগ্নিপতি, বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ২৫ ব্যাচের মো. সাইদুজ্জামান জয়পুরহাটের ডিসি হয়েছেন, এই সাইদুজ্জামান টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের ইউএনও থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারি অফিশিয়াল বনভোজনের আয়োজন করেছিলেন এবং সমালোচিত হওয়ার কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

২৪ ব্যাচের নাফিসা আরেফীন গাজীপুরের ডিসি হয়েছেন, তার স্বামী একই ব্যাচের রফিকুল ইসলাম বিগত জানুয়ারি ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর বাণিজ্যমন্ত্রীর পিএস হয়েছিলেন।

ঢাকার ডিসি তানভীর আহমেদ সাবেক লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হকের পিএস ছিলেন। চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদ জেলা প্রশাসক গাইবান্ধা। দীর্ঘদিন থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরত। তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে জানা গেছে।

খন্দকার ইশতিয়াক জেলা প্রশাসক নোয়াখালী। আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য এবং সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

রাজশাহীর ডিসি হিসেবে পদায়িত মাহবুব রহমান আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে । বিগত সরকারের আশীর্বাদপ্রাপ্ত সুবিধাভোগী সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান রহমাতুল মুনিমের পিএস ছিলেন নায়িরুজ্জামান। তিনি পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক হয়েছেন।

নুসরাত সুলতানা কুড়িগ্রাম জেলায় পদায়িত। তার স্বামী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও ফাতেমা তুল জান্নাত মুন্সীগঞ্জ জেলা, আহমেদ কামরুল হাসান বাগেরহাট, সিফাত মেহনাজ মেহেরপুর, দেলোয়ার হোসেন বরিশাল জেলা ও ইসরাত ফারজানা ঠাকুরগাঁও জেলায় পদায়িত হয়েছেন। বিগত আওয়ামী সরকারের সময় ডিসি ফিটলিস্টে তাদের নাম ছিল। ওই লিস্ট করেছিলেন প্রভাবশালী ও অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close