নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শ্রমিক-মালিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে : ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কল-কারখানাসহ সব ক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, আমার একটা বড় আশা, যে মেয়াদকালে আমরা এখানে থাকব, এরই মধ্যে শ্রমিক-মালিকের সম্পর্কটা যেন সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়লগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

জেনেভা কনভেনশনে যোগদান প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা বহুদিন পড়ে আছে, আমরা জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। সবাই যখন একটা টিম হলাম; শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই যখন টিম হলাম ওটাও আমরা করে ফেলব।

তিনি বলেন, ওটা না করলে সামনে এগিয়ে যাওয়া কষ্টকর হবে। যেখানেই যাবেন এটা বাধা দেবে। পশ্চিমারা বলছে তোমরা শ্রমিকদের যা শর্ত, প্রাপ্য এগুলোতে তোমরা সই করছ না। কাজেই যদি আমাদের এগিয়ে যেতে হয় পরিষ্কারভাবে হতে হবে। ড. ইউনূস বলেন, আমাদের সাহস দিন, এগিয়ে আসুন, আমরা সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করে ফেলি।

এর আগের দিন বুধবার, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা একই প্রসঙ্গে বলেন, ‘তৈরি পোশাক, ঔষধশিল্প এসব এলাকায় শ্রমিক ভাইবোনেরা তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্রমাগতভাবে এই শিল্পের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন। এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপ্লবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি সেটা নিয়ম নীতিবিহীন দ্রুত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছি। ঠিক এই সময় আমাদের শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। সেটা কিছুতেই কারো কাম্য হতে পারে না।’

তিনি ওই ভাষণে আরো বলেন, ‘শ্রমিক ভাইবোনদের অনেক দুঃখ আছে। কিন্তু সেই দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে আপনাদের মূল জীবিকাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সেটা ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে সেটা ঠিক হবে না। শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যার সমাধান আমরা অবশ্যই বের করব। আপনারা কারখানা খোলা রাখুন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন। দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন। আমরা আপনাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করব। মালিকপক্ষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা শ্রমিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। কারখানা সচল রাখুন। অর্থনীতির দুর্বল স্বাস্থ্যকে সবল করে তুলুন।’

ঔষধশিল্প ও তৈরি পোশাকশিল্প দেশের গৌরব। এর মাধ্যমে আমাদের শ্রমিক ভাইবোনেরা ও তাদের কর্মকুশলতা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে। এর সাফল্য এখন থমকে আছে। আমরা এই দুই শিল্পকে তাদের সম্ভাব্য শীর্ষে নিয়ে যেতে চাই। দুর্বল করার তো প্রশ্নই ওঠে না। এই দুই শিল্পের কোথায় কোথায় বাধা আছে, সমস্যা আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে তাকে বাধামুক্ত করতে চাই। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের একত্রিত করে তাদের সহযোগিতা চাইব যেন বাংলাদেশের এই শিল্প দুটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি আস্থাযোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে পারে। সবকিছুই সম্ভব যদি আমরা শ্রমিক-মালিক সম্পর্কটা একটা নির্ভরযোগ্য, আনন্দদায়ক করে গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সরকারের প্রথম মাস কাটল। দ্বিতীয় মাস থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি হিসেবে নতুন শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের সূচনা করতে চাই। এটা দেশের সবার কাম্য। দেশের নতুন প্রজন্ম নির্ভয়ে যেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’

উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের মুখে ৮৬টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। এ ছাড়া ১৩৩টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে বৃহস্পতিবার সড়ক অবরোধ করে কোথাও কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশ ও কারখানা মালিক সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের টানা শ্রমিক অসন্তোষের মুখে মঙ্গলবার থেকে কারখানাগুলোয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে শুরু করে মালিকপক্ষ। সবশেষ আজ সকাল পর্যন্ত ৮৬টি কারখানার কর্তৃপক্ষ ফটকের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস টাঙিয়ে দেয়। এ ছাড়া কাজ না করে কর্মবিরতিতে যাওয়ায় আরো ১৩৩টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ছুটি দেওয়া কারখানার শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে যায়। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

শিল্পপুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘গত দুই দিন ও আজ সকাল পর্যন্ত ৮৬টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকরা কর্মবিরতি করায় আরো ১৩৩টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সড়ক ও কারখানার বাইরের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তায় কঠোর নজরদারি, টহল ও অবস্থান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close