নিজস্ব প্রতিবেদক
কৃষিতে এখনো বহাল স্বৈরাচারের দোসররা
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস ছিলেন ওয়াহিদা আক্তার। পরে হন পরিচালক। এরপর হন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব। তারই আস্তাভাজন ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. মাহবুবুল হক পাটোয়ারী ও অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) ড. মলয় চৌধুরী। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কার শুরু হলেও বহাল তবিয়তে আছেন এ আমলারা। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সামনের দিনে যাচাই-বাছাই করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাসিনা সরকারের পতনের এক দিন আগে ৪ আগস্ট রাজধানীর খামারবাড়ি ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’- ব্যানারে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের নেতৃত্বে যে কথিত শান্তি সমাবেশের মহড়া হয় তার মাস্টারমাইন্ড মাহবুবুল হক পাটোয়ারী। তার নির্দেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য কর্র্মকর্তা আমিনুর ইসলাম ও পরিচালক সুরজিত সাহা রায় ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করে ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেয়। এছাড়াও কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য কর্র্মকর্তা আমিনুর ইসলাম সমন্বয়কারীদের নিয়ে প্রকাশ্যে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে এবং জোরপূর্বক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেন। কৃষি সচিবের শান্তি সমাবেশের আগে মাহবুবুল হক এবং ড. মলয় চৌধুরী খামারবাড়ির প্রকল্প পরিচালকদের সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। ওই প্রকল্প পরিচালকরা জানান এ তথ্য।
একাধিক কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার রক্ত সিঁড়ি বেয়ে অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার দুর্নীতিবাজ ও দলবাজদের সরিয়ে দেওয়া হলেও বহাল আছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বেশকিছু কর্মকর্তা। আর হাসিনার পক্ষে ৪ আগস্টের শান্তি সমাবেশে যাওয়া কর্মকর্তাদের নানা কৌশলে স্বপদে রাখার চেষ্টা করছেন মাহবুবুল হক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাহবুবুল হক পাটোয়ারী, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) ড. মলয় চৌধুরী ও তাদের অনুসারীদের চাকরি থেকে অপসারণ করে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করলে আরো সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। তাছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে সাবেক সচিব ও মন্ত্রীর অনুসারীদের না সরালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তারা যেকোনোভাবে সার, বীজ ও সেচের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারেন। ফলে এখনই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরেই কাজের সুবাদে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোয় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড হয়ে ওঠেন মাহবুবুল হক পাটোয়ারী। শুধু সচিবই নয়, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাককে প্রকল্প থেকে দুর্নীতির অর্থ সংগ্রহ করে দিতেন। এমনকি একটি প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে প্রধান কর্তাব্যক্তি নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি তদবির করেন। প্রকল্পগুলোয় যন্ত্র সরবরাহ না করেই সরকারের দেওয়া ভর্তুকির অর্থ উত্তোলন করেন। জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প তার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এক দশকের বেশি সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতেন। প্রকল্প পরিচালকদের কাছ থেকেও নিতেন বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা। টাকার বিনিময়ে নতুন পিডি নিয়োগ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি পরিবর্তন করে তাদের দূরবর্তী স্থানে বদলি বাণিজ্যে জড়িত এ কর্মকর্তা ওয়াহিদা আক্তারের সঙ্গে বিগত কয়েক বছরে হয়েছেন শতকোটি টাকার মালিক।
জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্প ও এবং সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প এর প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে টেন্ডারের কাজ নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় গত ২৮ মে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়; নিয়োগ দেওয়া হয় সরকারদলীয় এবং ওয়াহিদা আক্তারের আস্থাভাজন দুজন কর্মকর্তাকে। অভিযোগ আছে ঢাকা শহরে নিকট আত্মীয়ের নামে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট এবং সাভারে রয়েছে কয়েক একর জমি। এছাড়া নিজের সন্তানদের বিদেশে পড়ালেখার করানোর মাধ্যমে এরই মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন মাহবুবুল হক পাটোয়ারী। অভিযোগের বিষয়ে জানতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আগের সরকারের সময়ে অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। আবার যারা বিভিন্ন সময়ে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের বিষয়েও আমরা দেখভাল করছি। আমরা এরই মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) ড. মলয় চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
"