নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শিল্পাঞ্চলে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য

সাভারের আশুলিয়ায় টানা কয়েকদিন শ্রমিক অসন্তোষের পর কাজে ফিরতে শুরু করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল শনিবার সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, জামগড়া, ডিইপিজেড, পলাশবাড়ীসহ বেশকিছু এলাকার কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এতে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ পরিস্থিতি। শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়ক ও কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। দুপুর পর্যন্ত কোথায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে তবে কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে তাদের বেতন, হাজিরা বোনাস, ভাতা বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। কর্মবিরতির মুখে ১৭টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, এখন পর্যন্ত ১৭টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানার সামনে সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি জানান, সকালে কারখানাগুলোয় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল। তবে দাবি পূরণ না হওয়ায় কিছু কারখানার শ্রমিকরা কাজ করেননি। পরে সেগুলো ছুটি দেওয়া হয়।

এর আগে শুক্রবার শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা। বৈঠকে পোশাক খাতে অস্থিরতা নিরসনে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুক্রবার মধ্যরাতে সাভার ও গাজীপুরে শুরু হয়েছে যৌথবাহিনীর ‘ব্লক রেইড’। প্রয়োজনে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, শ্রমিক বিক্ষোভের নামে আর নৈরাজ্য করতে দেওয়া হবে না। ভাঙচুর, নাশকতায় জড়ালে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করবে পুলিশ। এরই মধ্যে সাভারে নেওয়া হয়েছে বাড়তি পুলিশ ফোর্স। শনিবার কারখানা খোলার পর যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে যৌথবাহিনী।

শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে গত বৃহস্পতিবার আশুলিয়ায় বন্ধ ছিল ১২৯টি কারখানা। বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বিকেলে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অস্থিরতা নিরসনে শ্রমিক ও মালিক কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে একমত হয়েছে। বৈঠকে শ্রমিক নেতারা বলেন, কিছু কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। পাশাপাশি কারখানায় নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার দাবি করেন তারা। এ সময় কারখানা মালিকরা তাদের বলেন, নতুন শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে, তবে আগে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত করতে হবে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) রেজাউল করিম বলেন, ‘পোশাক খাত আমাদের অর্থনীতির লাইফ লাইন। এ খাত ঘিরে যারা অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু কারখানায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশকিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের ধরতে ব্লক রেইড ও যৌথ অভিযান চলছে।’ পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, যারা শিল্পাঞ্চলে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকের নাম পেয়েছে এবং তাদের ধরতে অভিযান চলছে। এছাড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ২০০-এর বেশি সদস্যকে সাভারে নেওয়া হয়েছে।

সাভারে অভিযানে শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ১৭ জনকে আটক করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী তাদের আইনের আওতায় নেয়। এছাড়া গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক হন তিনি। কোনাবাড়ী থানার ওসি শাহ আলম জানান, ‘বেশ কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের শিল্প এলাকা, টঙ্গী ও কোনাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক তৈরি কারখানায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী এলাকার নিরাপত্তাকর্মী মনিরুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া কয়েকটি কারখানার শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের মুখে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। শিল্প-কারখানার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সরকারি নির্দেশনায় শিল্পাঞ্চলে শুরু হয় যৌথ অভিযান। এরই মধ্যে নাশকতার অভিযোগে আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। জোরদার করা হয়েছে শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close