মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
শিক্ষার্থী ছেলের আন্দোলনে বাবা
আনসারদের হামলার ১১ দিন পর মৃত্যু
ছেলে গেছেন আন্দোলনে, তাই বসে থাকতে পারেননি বাবা। ছেলে ও শিক্ষার্থীদের টানে আন্দোলনে গিয়ে শেষমেশ প্রাণ গেল বাবার। নিহত শহীদ শাহিন হাওলাদারের জানাজা শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার তার গ্রামে বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার সদস্যরা। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে যান রাজধানীর কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী হাসান আহমেদ বিশাল। খবর পেয়ে রাতেই বাবা শাহিন হাওলাদারও ছুটে যান ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর আনসার বাহিনীর সদস্যদের হামলা চলছে। তিনি তা ঠেকাতে যান। এতে তার ওপরও হামলা হয়। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়। ১১ দিন চিকিৎসাধীন থেকে গত বুধবার সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ওইদিনই তার লাশ নেওয়া হয় গ্রামের বাড়ি মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বাজিকরখণ্ডে। সেখানে বৃহস্পতিবার সকালে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
বাড়িতে লাশ নেওয়ার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস। ছুটে আসেন শত শত মানুষ। বিএনপিসহ সর্বস্তরের মানুষ তার জানাজায় শরিক হন। আসেন পুলিশসহ প্রশাসনের লোকজন। জানা গেছে, শাহিনের পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। শাহিন ঢাকায় রেন্ট-এ কারের চালক ছিলেন। থাকতেন পরিবারসহ ঢাকায়ই। শহীদ শাহিন হাওলাদারের ভাই শিপন হাওলাদার বলেন, আনসাররা আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করে। এতে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে ওইদিনই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মাথায় অস্ত্রপাচারও হয়। তারপর আইসিইউতে থাকার পর মৃত্যু হয় তার।
ছেলে হাসান আহমেদ বিশাল বলেন, আমি ছাত্রদের সঙ্গে আনসারবিরোধী আন্দোলন ছিলাম। সেই খবর শুনে তিনিও ছুটে আসেন। পরে সেখানে এসে বাবা দেখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে মারধর করছে আনসার সদস্যরা। হাসনাত আবদুল্লাহকে ঠেকাতে গেলে সেখানে তাকেও মারধর করা হয়। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শাহিনের স্ত্রী দীপ্তা বেগম বলেন, আনসার সদস্যরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, আমি এর বিচার চাই। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য একটি চাকরির দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। মা কুলসুম বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের যেন বিচার হয়। আমার ছেলের পরিবার চলবে কীভাবে, সেজন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা হলে ভালো হয়। শহীদ শাহিনের পরিবারকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলে জানান নিহত শহীদ শাহিন হাওলাদারের ছেলে শিক্ষার্থী হাসান আহমেদ বিশাল।
"