নিজস্ব প্রতিবেদক
সাভারে ৬০ পোশাক কারখানা বন্ধ
শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, চাকরি স্থায়ীকরণ, টিফিট ভাতা, হাজিরা বোনাস, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানা দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন ঢাকার সাভার, ধামরাই ও গাজীপুরের শ্রীপুরের গার্মেন্ট শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভের পর সাভারে ৬০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সাভারের ৬০টি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা : ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় গতকাল বুধবারও বিভিন্ন দাবিতে পোশাকশ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। শ্রমিক বিক্ষোভের পর অন্তত ৬০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সকালে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবোর বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বন্ধ ঘোষণা করা কারখানার শ্রমিকরা চালু থাকা বিভিন্ন কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ করেন। কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন তারা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে চাকরিপ্রত্যাশীরাও যোগ দেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পরে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
শারমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, সকালে কারখানায় কাজ শুরুর পর কারখানার বাইরে কিছু লোকজন স্টাফদের বহনকারী দুটি মিনিবাস ভাঙচুর করেন। এ ধরনের পরিস্থিতে সাধারণত কারখানায় ঢুকে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভরত শ্রমিকরা একপর্যায়ে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে কিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় হামলা ঠেকাতে কারখানার সামনে অবস্থান নেন। পলাশবাড়ী এলাকার গিল্ডান বাংলাদেশ নামের পোশাক কারখানার সামনে কারখানায় হামলা ঠেকাতে অবস্থান নেন ওই কারখানার শ্রমিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কারখানার এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা কাজ করতে চাই। কারখানা আমাদের সম্পদ। তাই এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কারখানা বন্ধ হলে খাব কী?’
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকরা কারখানায় আসেন। পরে বিভিন্ন কারখানার সামনে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা হা-মীম গ্রুপের কারখানার শ্রমিকদের দেখে তারা কেন কারখানায় কাজ করছেন, এমনটি বলার পর কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে আশুলিয়ার অন্তত ৬০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
শ্রীপুরে ৯ দফা দাবিতে কারখানা শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ : গাজীপুরের শ্রীপুরে ৯ দফা দাবিতে আরএকে সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। গতকাল সকাল ৬টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নয়নপুর বাজারসংলগ্ন ধনুয়ায় কারখানার সামনে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, তাদের দাবি কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তাদের কাছে কোনো দাবি নিয়ে গেলে তারা সবসময় শ্রমিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণসহ চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। শ্রমিকরা জানান, কোম্পানির ভেতর থেকে শুরু করে কোম্পানির উচ্চপদস্থ ভারতীয়দের অনতিবিলম্বে অপসারণ ও বাড়তি বেতন এই মাসের মধ্যে নিশ্চিতসহ ৯টি দাবি মেনে নিতে হবে। পরে পৌনে ১১টার দিকে পুলিশ প্রশাসন কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সরে যায়। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আজিজুল হক বলেন, মালিক পক্ষ দাবি মেনে নিলে শ্রমিকরা বেলা পৌনে ১১টার দিকে মহাসড়ক থেকে সরে যায়। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ধামরাইয়ে জিএমের পদত্যাগসহ ১১ দাবি : ঢাকার ধামরাইয়ে প্রতিক সিরামিকের জি এম আকরামের পদত্যাগসহ ১১ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শ্রমিকরা।
গতকাল বুধবার বিকেল ৩টার দিকে ধামরাই উপজেলার সোমবাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এই সময় সেনাবাহিনীর একটি টিম তাদের শান্ত করে কারখানার ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। কারখানার ভেতরে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে শ্রমিকরা। এই সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন লোকজন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেতন ভাতার বৈষম্য নিয়ে শ্রমিকরা ১১ দফা দাবি পেশ করে বিক্ষোভ করছেন। এজি এম আকরামের পদত্যাগ দাবি করে শ্রমিকরা বলেন, আকরাম শ্রমিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং কথায় কথায় চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। মাঝে মধ্যে শ্রমিকদের মারধর করেন। কোনো শ্রমিকের স্বামী অথবা কারো বাপ-মা মারা গেলেও ছুটি দেন না।
শ্রমিকরা আরো বলেন, ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করতে হবে। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কোনো শ্রমিককে হয়রানি ও চাকরিচ্যুত করা যাবে না। ৬ হাজার টাকা বেতন থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবি করেন তারা। নতুন অস্থায়ী শ্রমিকদের ৬ মাসের মাথায় স্থায়ী করার দাবি জানানো হয়। প্রত্যেক সেকশনে হিট অ্যালাউন্স দিতে হবে। শ্রমিকদের ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা হিট অ্যালাউন্স দিতে হবে। নাইট অ্যালাউন্স ২০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা করতে হবে। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে। প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে। শ্রমিকদের নিরাপদে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্রমিকদের আন্দোলন চলমান থাকায় আত্মগোপনে চলে গেছেন এজিএম আকরামসহ কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তায় কারখানার সামনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।
"