প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
বন্যায় মৃত বেড়ে ৬৭
বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ফেনীতে ২৬ জন। গতকাল সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হালনাগাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লায় বন্যার পানি নামার পর ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন, আর নোয়াখালীতে পানি কমতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন। এসব এলাকার প্রতিনিধিরা এসব কথা জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যাক্রান্ত জেলার ১১টি জেলা হলো- ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। বন্যাপ্লাবিত উপজেলা ৬৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত ৫০৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬৭টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে।
বন্যায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪২ জন, নারী ৭ জন ও শিশুর সংখ্যা ১৮। কুমিল্লায় মারা গেছেন ১৭ জন, ফেনীতে ২৬ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, নোয়াখালীতে ১১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন, কক্সবাজারে ৩ জন এবং মৌলভীবাজারে ১ জন। মৌলভীবাজারে নিখোঁজ আছেন ১ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পানিবন্দি লোকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৩ হাজার ৬১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় মোট ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৪১ জন লোক এবং ৩২ হাজার ৮৩০টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে মোট ৪৭২টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
কুমিল্লা : জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। ধীরে ধীরে বন্যার পানি নামার পর ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। কুমিল্লা বন্যাকবলিত উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কে কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্যকবলিত উপজেলাগুলো ঘুরে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লা-বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া-মীরপুর সড়ক, রাজাপুর-শংকুচাইল সড়ক, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রামের সড়ক ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিভিন্ন গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়কগুলো ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক সড়ক যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। সড়কে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এলজিইডি সূত্র জানা যায়, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ১৪টি উপজেলার কয়েক হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে সেতু ও কালভার্ট। তবে সম্পূর্ণভাবে পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। লাকসাম, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।জানা যায়, বুড়িচং সদর থেকে রাজাপুর হয়ে শংকুচাইল পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার পাকা সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গর্তগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয়রা।
নোয়াখালী : জেলায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। গত চার দিন বৃষ্টিপাত না থাকায় পানি কমেছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সৈয়দ মহিউদ্দিন জানান, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি হয়েছে ১৪২ জন। বর্তমানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৩০৫। তবে নতুন করে সাপে দংশন করা কোনো রোগী আসেনি। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, জেলার ১ হাজার ২৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। বাড়ি ফিরে তাদের ঘর এবং বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছে। প্রত্যেককে প্রয়োজনীয় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন দেওযা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা হবে।
"