নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর পিআরও আসলামের অঢেল সম্পদ

সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন অঢেল সম্পদের মালিক বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই পদে টানা ১০ বছর থাকার সুবাদে অনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওই বিত্ত-বৈভবের মালিক হন তিনি।

সূত্র বলেছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুর পরোক্ষ সমর্থনে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে মীর মোহাম্মদ আসলাম গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। নিজের স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠান খুলে শত শত কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কমিটির সদস্য ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে গেলে তালিকা থেকে বাদ যেতেন না তিনি। প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন হয়ে উঠায় শক্তিশালি বলয় তৈরি করে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে কোটি টাকার মালিক বনে যান।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো অভিযোগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এরমধ্যে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন শিগগির অনুসন্ধানে নামছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন পরিচালক বলেন, ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের অন্যতম। এ মন্ত্রণালয়ে যারা দুর্নীতি করেছেন, তাদের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ পিআরও মোহাম্মদ আসলামের নাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুদক সত্যতা অনুসন্ধানে নামবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মীর মোহাম্মদ আসলাম তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, এগুরোর কোনো সত্যতা নেই।

তথ্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন ২০১৪ সালের দিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এখান থেকেই ভাগ্য খোলা শুরু তার। গত এক দশকে নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন। বিদেশ সফর করেছেন প্রায় অর্ধশতবার। কখনো প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বা মন্ত্রণালয়ের দলের সঙ্গে। তিনি প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ সফরে তার নাম সংযুক্ত করতেন কর্মকর্তারা। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুই মোহাম্মদ আসলামের ভাগ্য পরিবর্তনের মুল কারিগর হিসেবে কাজ করেন। মন্ত্রণালয়ে থেকে ব্যবসা ও বিভিন্ন কাজের কমিশন নেওয়ার সুযোগ করে দেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তার স্ত্রী জাকিয়া সুলতানার নামে ‘গ্রীণ অ্যানার্জি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে তার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কাজ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থনের তাকে প্রত্যাহার করে পিআইডিতে সংযুক্ত করা হয়। গুরুতর অভিযোগ সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে একাকার হেয়ে পিডিবি, গ্যাস ফিল্ড ডেসকোসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। কোনো কোম্পানির এমডি বা কোনো কর্মকর্তা যদি এ সিন্ডিকেটের কথা না শুনতো, তারই ইশারায় সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নাম সর্বস্ব অনলাইন বা পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করাতেন। বিভিন্ন কোম্পানির এমডি বা অন্য কর্মকর্তা পদোন্নতি, নতুন কোম্পানিতে নিয়োগ পেতে আসলাম নিয়ামক হিসেবে কাজ করতেন। মোটা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন কোম্পানির প্রকল্প অনুমোদনেও তদবির করতেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীকে ‘ম্যানেজ’ করে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে দিতেন তিনি। এছাড়া প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতেন। বিশেষ করে ডিপিডিসি, ডেসকো, আরইবি, তিতাস, আরপিজিসিএল, কোল পাওয়ার, নেসকো, ওজোপাডিকোসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রভাব বিস্তার করতেন তিনি। অলিখিত সমঝোতা হয় ওইসব সংস্থার সঙ্গে। বিনিময়ে প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে কোম্পানির বিভিন্ন প্রকল্প পাশ করিয়ে দিয়ে নিতেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর কয়েকদিন গা ঢাকা দেন এ তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তা। এরপর সময় সুযোগ বুঝে প্রক্যাশ্যে আসেন। তার আগে তিনি মন্ত্রণালয় থেকে দুর্নীতির অনেত ফাইলপত্র সরিয়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার সিন্ডিকেটের সবাই পলাতক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close