নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কমছে পানি, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

বন্যা-পরবর্তী ডায়রিয়া ও চর্মরোগের প্রকোপ * হাসপাতালে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী * ফেনীর তিন উপজেলার বাড়িঘরে এখনো পানি

দেশে এত ভয়াবহ বন্যা গত ৩০ বছরে দেখেনি মানুষ। আগস্টে উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও প্রবল বর্ষণে দেশের ১১ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। পানিবন্দি হয়ে পড়েন ও ক্ষতির মুখে পড়েন লাখ লাখ মানুষ। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পানিবাহিত রোগী। ডায়রিয়া, জ্বর ও সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ছুটছে মানুষজন। তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সার্বিকভাবে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরছে। দুর্গত জেলাগুলোয় যোগাযোগব্যবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। গত শনিবার পর্যন্ত বন্যায় পর্যন্ত ৫৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, বন্যাকবলিত ১১টি জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ৫১৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৪ কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা এবং ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫ লাখ টাকা শিশুখাদ্যের জন্য ও ৩৫ লাখ টাকা গো-খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কমছে পানি বাড়ছে রোগ : বন্যার প্রথম ধাক্কায় বাড়িঘর ডুবেছিল ফেনীর সোনাগাজী। ওই এলাকার মতিগঞ্জের বাসিন্দা কুলসুম আক্তার। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় স্বামী-সন্তানসহ আশ্রয় নেন প্রতিবেশীর বাড়িতে। পানি নেমে যাওয়ায় এক সপ্তাহ পর আবার বাড়ি ফেনেন। এরই মধ্যে ৯ বছরের শিশু শৈবালকে নিয়ে ছুটতে হয়েছে হাসপাতালে।

কুলসুম আক্তার বলেন, ‘বন্যার কয়েকদিন বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে ট্যাংকে জমে থাকা পানি পান করেছে মেয়ে। এরপর থেকে বমি ও ডায়রিয়া শুরু হয়েছে। অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হলেও বিপদ কাটেনি।’

জ্বর এবং ডায়রিয়া নিয়ে একই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে তিন বছরের সাইদুল। গতকাল রবিবার বিকেলে তাকে ভর্তি করা হয়। শিশুটির নানি বিলকিস বেগম বলেন, ‘বন্যার সময় এক ফোঁটা বিশুদ্ধ খাবার পানি ছিল না। টিউবওয়েল পানিতে ডুবে ছিল। ওই সময় পানি ফুটিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি। তবুও শেষরক্ষা হয়নি। এখন ছেলেটি জ্বর-ডায়রিয়ায় কষ্ট পাচ্ছে।’

শৈবাল ও সাইদুলের মতো পানিবাহিত নানা রোগ নিয়ে ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে আরো অনেকে। গতকাল রবিবার সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ধারণক্ষমতার চেয়ে আট গুণ বেশি ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি রয়েছে। রোগীদের কারো ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়, এমনকি সিঁড়িতেও আছে কেউ কেউ। জায়গা না পেয়ে অনেকে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আসিফ ইকবাল বলেন, বন্যা-পরবর্তী ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। খাওয়ার পানি ও খাবার থেকে মূলত এটা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা করে মেঝেতে শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. অর্ণব মল্লিক বলেন, ‘ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। আমরা রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছি না। অতিরিক্ত বিছানা বিছিয়ে হলেও ভর্তি নিচ্ছি। তাই একসঙ্গে এত রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।’

জেলার সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, বন্যার্তদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি জেলা শহরে বেসরকারি কনসেপ্ট হাসপাতাল, মেডিল্যাব, মেডিনোভা, জেডইউ মডেল, আল আকসা, ফেনী ডায়াবেটিস এবং মিশন হাসপাতাল কাজ করছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালগুলোয় বিনামূল্যে বন্যার্তদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ৩০ জন চিকিৎসকের একটি বিশেষ দল ফেনী এসেছে।

ফেনীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় তছনছ পুরো জনপদ। ১৬ লাখ মানুষের এ জেলার অধিকাংশ এলাকা ডোবে বানের পানিতে। টানা কয়েক দিন বাড়ার পর কোথাও কোথাও পানি নামতে শুরু করায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে ফেনীতে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগবালাই। ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটব্যথা, জ্বর ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে বানভাসিরা। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংকট তৈরি হয়েছে।

জেলায় বন্যার্তদের চিকিৎসায় এবং বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৪টি স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। তিনি বলেন, জেলা শহরে সেনাবাহিনীর স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপনসহ ছয় উপজেলায় ছয়টি স্বাস্থ্য ক্যাম্প এবং বেসরকারি সাতটি হাসপাতালকে এ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নদ-নদীর পানি কমায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না কুমিল্লার বন্যার্তদের। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ময়লা-আবর্জনা। ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। বন্যাকবলিত এ জেলার অনেক পাড়া-মহল্লায় এখনো পানি জমে আছে। এ পানি নর্দমায় মিশে কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দেখা দিয়েছে চর্মরোগ ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ।

কুমিল্লায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে ৮ হাজার মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়া স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ২২ জনের প্রাণ গেছে। কুমিল্লার সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী আসছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয়। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে বন্যাকবলিত ১৪টি উপজেলার মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এসব উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার মানুষ। এ উপজেলায় গতকাল পর্যন্ত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ২৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলাটিতে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চারজনের মৃত্যু হয়েছে লাকসামে। ভয়াবহ অবস্থা বুড়িচং উপজেলারও। বুড়িচংয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১৩৩ জন পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

বাড়ছে সাপে কাটা রোগী : কুমিল্লায় সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। বাড়ছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৬৮ জন সাপের ছোবল খাওয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের বেশির ভাগ সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলেও মুরাদনগরে সাপের কামড়ের পর দেরি করে হাসপাতালে আসায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় জেলা জুড়ে এটিই একমাত্র সাপের ছোবলে মৃত্যু।

জেলার সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার বলেন, ‘পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। আক্রান্তদের কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। জেলায় ২০৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। কোনো ওষুধেরই অপ্রতুলতা নেই। আমরা সব মানুষকে সমানভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে বদ্ধপরিকর।’

মৌলভীবাজারে বন্যার উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি : মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। বন্যায় জেলার অনেক সড়ক তলিয়ে যায়। এগুলোর মধ্যে যেসব সড়ক থেকে পানি সরে গেছে, সেখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। এগুলোর কোনোটি ভেঙে গেছে, কোনোটিতে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত সময়ে সড়কগুলো মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া কৃষি ও মৎস্য খাতেও ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আবদুল্লাহ জানান, জেলার ২১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে ৯টি সেতু ও কালভার্ট। এসব সড়ক ও সেতু মেরামত এবং পুনর্নির্মাণে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়ছার হামিদ জানান, জেলায় ছয়টি কালভার্ট ও একটি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির নিচে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৮ কিলোমিটার সড়ক। সম্পূর্ণভাবে পানি নামার পর ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, বন্যায় ৪৯ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমির ধান ও অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও ফসলের প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা হয়নি। অধিকাংশ ঘরবাড়ি থেকে পানি সরে গেলেও ফসলি জমিতে এখনো পানি রয়েছে, যা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ সিরাজী জানান, বন্যায় ১ হাজার ৬৫০টি পুকুর ও দীঘির ২১০ টন মাছ পানির স্রোতে ভেসে গেছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। তবে ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে, কারণ অনেকেই এখনো তাদের ক্ষতির তথ্য দেয়নি।

ফেনীর সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে বাড়িঘরে এখনো পানি : ফেনীর কয়েকটি উপজেলার বাসিন্দারা এখনো পানির সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও সদরের কিছু উপজেলার গ্রামীণ রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বাড়িঘরে পানি রয়েছে। এখনো কিছু মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এখনো প্রায় ২০ হাজার লোক আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছেন দাগনভূঞা উপজেলায়।

দাগনভূঞা উপজেলার কর মোল্লাপুর, উত্তর করিমপুর, রাজাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা এখনো পানির নিচে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবেদিতা চাকমা বলেন, গত শনিবার ১১ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। পানি ধীরে ধীরে কমছে।

গতকাল রবিবার দাগনভূঞার উত্তর করিমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চলাচলের সড়কটি হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। ওই পানি মাড়িয়ে ৩০০ গজ গেলেই উত্তর করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির নিচতলা থেকে এখন পানি নেমেছে। স্কুলের নিচতলা ও দোতলায় এখনো শ খানেক লোক অবস্থান করছেন। বৃদ্ধা নারী জরিনা বিবি জানান, তার ঘর লালমিয়া টোকবাড়িতে। ছয় দিন ধরে তিনি এখানে রয়েছেন। ঘরে পানি এখন কিছুটা কমে হাঁটুর নিচে নেমেছে। আর এক দিন পর বাড়িতে ফিরবেন বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান বলেন, এখনো কিছু এলাকায় পানি রয়েছে। ঘরবাড়িতেও পানি আছে। পানি নামার পর ঘর পরিষ্কার করতেও সময় লাগে। তাই এখনো প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। বাড়ির সামনে পানি থাকায় যাতায়াতে এখনো ভেলা ব্যবহার করছেন বাসিন্দারা।

বন্যায় কমলগঞ্জে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও টানা বৃষ্টিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি। এরই মধ্যে সরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করেছে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠিয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, বন্যায় কমলগঞ্জের ১৯৬টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১৭০ টন চাল দেওয়া হয়েছে। এখন ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য বরাদ্দ এলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি মেরামত করে দেওয়া হবে।

বন্যার পানির কারণে উপজেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাঈফুল আজম। তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অনেক জায়গায় ১০-১৫ ফুট রাস্তা পুরোপুরিভাবে ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারা রাস্তাগুলোর তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছেন। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সেগুলো সংস্কার করা হবে। কিছু জায়গার কাজ জরুরি হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, বন্যায় উপজেলার ১২ হাজার হেক্টর আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। আংশিক নষ্ট হয়েছে আরো ১২ হাজার ৮০ হেক্টর জমির ধান। এ ছাড়া ১০০ হেক্টর আউশ ও ৭৫ হেক্টর খেতের সবজি নষ্ট হয়েছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ৬০০ কৃষকের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের রোপা আমন ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শন করে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বন্যার কারণে প্রায় আড়াইশ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সহিদুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘বন্যার পানি পুকুরগুলোর সঙ্গে মিশে যাওয়ায় সব মাছ ভেসে গেছে। এতে পুকুরের মালিকদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তালিকা দিয়েছি। বরাদ্দ পেলে চাষিদের মাছের পোনা ও অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে।’

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার্তদের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। তারা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করেছেন। তালিকা অনুযায়ী সরকারিভাবে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন খাতে সরকারের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close