নিজস্ব প্রতিবেদক
চিকিৎসকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ রোগীদের ভোগান্তি
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে আজ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা। গত শনিবার রাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দীপ্তর চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারদের ওপর হামলা করে শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে ওইদিন রাত থেকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং স্বজনরা।
গতকাল রবিবার সকাল থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ঢামেকের জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় হামলাকারীদের আটক ও শাস্তি নিশ্চিত এবং সারা দেশে চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ২ দফা দাবি জানানো হয়। চিকিৎসকদের এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় সারা দেশে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেন তারা। সেই সঙ্গে আরো ৬ দফা দাবিও জানানো হয়।
নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. আবদুল আহাদ চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসকদের মারধরকারীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবি ও নিরাপত্তার আগ পর্যন্ত সারা দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল শাটডাউন ঘোষণা করা হলো।
ডা. আবদুল আহাদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যে দুবার ইনসিডেন্ট ঘটেছে সেখানে আমাদের চিকিৎসকরা নিজের জীবনবাজি রেখে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়েছে। এমনকি নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়েছে, খাবার দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশের চিকিৎসকরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটা পার্ট। গতকাল (শনিবার) যে ঘটনা ঘটেছে নিউরো সার্জারি অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগীর লোক এক ডাক্তারকে বের করে এনে মারধর করে। শুধু তাই নয় মারতে মারতে ২০০-৩০০ মিটার পর্যন্ত পরিচালকের রুমে নিয়ে যায়। এ বিষয় নিয়ে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করি। এই বৈঠকে দুটি বিষয় সিদ্ধান্ত হয়। একটি অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি ছিল আমাদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করা। আমরা যারা জরুরি বিভাগে থাকি তাদের নিরাপত্তার জন্য আর্মি, পুলিশসহ অন্য ফোর্স এখানে থাকবে। কিন্তু আমাদের প্রশাসন সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, শনিবার রাতে আরো দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। বাইরে এক গ্রুপ এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করে। সেই গ্রুপ চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেলে আসে। তখন বিপক্ষ গ্রুপ ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসা নিতে আসা গ্রুপকে আবার মারধর করে। যেখানে রোগীও নিরাপদ না সেখানে চিকিৎসকরা কেমন করে নিরাপদ থাকবে। কিছুক্ষণ পর জরুরি বিভাগের ইমার্জেন্সি মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারে (ওসেক) এক যুবক মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানে দায়িত্বে থাকা ডাক্তার, নার্সদের ওপর হামলা করে। ইমার্জেন্সি ভাঙচুর করে। আমরা দেখতে পাই এখানে চিকিৎসক, রোগী কেউ নিরাপদ না।
প্রসঙ্গত, শনিবার মধ্যরাতে খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে অন্য আরেক গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে অন্য আরেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অনস্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় রোগীর স্বজনরা। নিরাপত্তা শঙ্কায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। আলটিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই কর্মবিরতিতে যান তারা।
চিকিৎসকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ নিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘আমার ডাক্তার ভাইদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের ওপরে যে বা যারা হাত তুলেছে তাদের উপযুক্ত বিচার করতে হবে।’ গতকাল রবিবার দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে সারজিস লেখেন, ‘আমার ডাক্তার ভাইদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের ওপরে যে বা যারা হাত তুলেছে তাদের উপযুক্ত বিচার করতে হবে। যদি কোনো পেশেন্টের মৃত্যুর জন্য হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বা কোনো ডাক্তার দায়ী থাকে তবে তদন্তসাপেক্ষে তারও বিচার হতে হবে। কিন্তু আমার মনে হলো আর আমি কারো গায়ে হাত তুলে ফেললাম, এই স্পর্ধা কখনো মেনে নেয়া যায় না। সব চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা সোচ্চার আছে।’
"