রংপুর ব্যুরো, ঠাকুরগাঁও ও সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
দুর্নীতি-দুঃশাসনেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন
- মির্জা ফখরুল
দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দুঃশাসন, অত্যাচার, নির্যাতন নিপীড়ন যারা জনগণের ওপর চালিয়েছে এবং যারা বাংলাদেশকে ধ্বংসে পরিণত করেছে। তাদের বাংলার মাটিতে কখনো ক্ষমা হবে না। গতকাল বুধবার দুপুরে রংপুরের পীরগঞ্জে কোটা আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান দায়িত্ব হলো সব ফ্যাসিবাদদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, আবু সাঈদের আত্মত্যাগের কারণে দ্বিতীয়বার ‘স্বাধীনতা’ এসেছে। আবু সাঈদসহ এই যুদ্ধ কারো আত্মত্যাগ ভোলার নয়। এ সময় হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। পরে স্থানীয় জাফরপাড়া কামিল মাদরাসা মাঠে সম্প্রতি সমাবেশে যোগ দেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, আজকে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের এই বিজয়। সেই সঙ্গে সব শিক্ষার্থীকে স্কুলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। আজকের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফসল সবার মাঝে স্মরণীয় হিসেবে থাকবে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা। আপনারা চোখ কান খোলা রাখবেন সংখ্যালঘুর বাড়িঘর কেউ যেন লুটপাট না করতে পারে। এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
এদিকে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঠাকুরগাঁওয়ের নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি ও একটি চক্র এবং পতিত সরকারের গোষ্ঠীর লোকেরা বিভিন্নভাবে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ঘটনার নাকট সাজিয়ে প্রচার করছে। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী দিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ ভারতে চলে যাওয়ার জন্য সীমান্তের কাছে জমায়েত করেছিল। প্রশাসন ও বিভিন্ন গোয়েন্দা মাধ্যম আমাকে পরিষ্কার বলেছে, এটি সাজানো একটি নাটক।
ছাত্র-জনতার বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য একটি মহাল উঠে পড়ে লেগেছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এটি সাজানো নাটক না হলে তারা সেখানে সবাই খালি ছিল, সঙ্গে তাদের স্ত্রী-কন্যাসন্তান কেউ নেই। কিন্তু তারা বলছে, চলে যাচ্ছেন। এটা সম্পূর্ণ একটি নাটক। ভারতকে একটি ধারণা দেওয়া যে তারা এখানে নির্যাতিত হচ্ছে, তারা এই দেশে থাকতে পারবে না। আর এটিকে তাদের একটি গোষ্ঠী প্রচার করছেন। ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেনি যা ঘটেছে এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। তাই এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। যাতে ভুল বা মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত না হয়।
তিনি দলের নেতাকর্মীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আরো বলেন, আপনারা দেখেছেন যে আমাদের দল এসব ঘটনাকে প্রতিহত করার জন্য জেলার নেতাকর্মী কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। যদি এখানে আমাদের দলের কোনো লোকজন জড়িত আছে ও থাকে তাহলে ডিসি এবং এসপিকে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য বলা হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে। এছাড়াও আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।
অন্যদিকে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার নীলফামারীর সৈয়দপুরে সাংগঠনিক জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ছাত্র-জনতার রক্ত ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়েছেন। কিন্তু পালিয়ে গিয়েও হাসিনা এখন দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ১৫ আগস্ট মাঠে নেমে সহিংসতা করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের পরিকল্পনা, রাজপথে থেকে প্রতিহত করা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে। মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক জিয়াকে শাস্তি দিয়েছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা ও গুম করা হয়েছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আপনারা দেখেছেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ১৩ আগস্ট দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। খুনের সঙ্গে যারা জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের কাজ হলো দলকে সুসংগঠিত করে নিজেদের মধ্যে বিভেদ না রেখে ঐক্যের মধ্য দিয়ে চলা। জনগণকে সম্পৃক্ত করে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমান সরকারকে আমাদের সহায়তা করা। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অপপ্রচার চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ। এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। পরাজিত শক্তি যেন কোনোভাবেই আমাদের ছাত্র-জনতার বিজয়কে নস্যাৎ করতে না পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের বজায় রাখতে হবে। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
"