গাজী শাহনেওয়াজ
এনআইডি ইস্যুতে নানা সমীকরণ
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুরক্ষা সেবা বিভাগে নেওয়া ইস্যুতে নানা সমীকরণ দেখা দিয়েছে। ফলে হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে যেতে পারে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের কারণে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রি. জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন তার বক্তব্য থেকে আঁচ করা গেছে। অবশ্য ইসির কর্মকর্তারা ফের সোচ্চার হচ্ছেন; যাতে এনআইডি ও ভোটার তালিকা কার্যক্রম দুটি আলাদা না হয়। এজন্য প্রণীত আইনটি বাতিল চাইতে পারেন তারা। পাশাপাশি আগামীতে এনআইডি নিয়ে কেউ নতুন করে যেন ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেজন্য স্থায়ী সমাধানের দাবি তুলতে তারা একট্টা হচ্ছেন।
এদিকে, এই নতুন সমীকরণের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়োগ পাওয়ায় আশার আলো দেখছেন তারা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও ইসির অধীনে এনআইডি রাখার বিষয়ে ইতিবাচক বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছেন। বলছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যখন নির্বাচন কমিশনে ছিলেন তাদের হাত ধরেই ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগে এনআইডি নেওয়া হচ্ছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুটা উম্মা প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেদের কাজই ঠিকভাবে করতে পারে না; কীভাবে তারা এনআইডি সামলাবে। তবে এখনো এটি নিয়ে আলোচনার সময় হয়নি।
ইসির সচিব সফিউল আজিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এনআইডির কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। চলছে হস্তান্তর প্রক্রিয়াও। তবে এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আইন প্রণয়ন হওয়ায় যদি এটি শেষ পর্যন্ত সুরক্ষা বিভাগের অধীনে না নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আইনের জটিলতা দেখা দিবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর নানা টানাপড়েনের পর এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিতে আইন করে সরকার। ২০২৩ সালে এ আইন হয়। এখন পুরো বিভাগটি স্থানান্তরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জনবলের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। গত ৪ জুন সুরক্ষা বিভাগ থেকে ইসি সচিবের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে ইসির পক্ষ থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগকে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। ইসি সচিবের কাছে পাঠানো সুরক্ষা বিভাগের উপসচিব আবেদা আফসারী স্বাক্ষরিত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের লক্ষ্যে হালনাগাদ তথ্য প্রদান সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘জাতীয় পরিচয়ন নিবন্ধন আইন, ২০২৩’ অনুসারে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগের অনুকূলে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এ বিভাগের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামোং দ্য ডিফারেন্ট মিনিস্ট্রিজ অ্যান্ড ডিভিশন’ও সংশোধন হয়েছে। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, ইসির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য মোতাবেক এই অনুবিভাগে অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ৭১ জন। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার নিমিত্তে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের হালনাগাদ তথ্য জানা আবশ্যক।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এনআইডি যাতে সুরক্ষা বিভাগে না যায়, সেজন্য নতুন করে তারা একাট্টা হচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাবেক নির্বাচন কমিশনার হওয়ায় তাদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন বলে তারা আশাবাদী। বলেন, সেখানে আমরা জোরালো দাবি জানাবো বিদ্যমান আইনিটি বাতিলের। পাশাপাশি ইসির ভোটার তালিকা আইনের সঙ্গে এনআইডির কার্যক্রম যুক্ত করে একটা স্থায়ী সমাধান চাইব। আগামীতে নতুন সরকার এসে যাতে এটি কাঁটাছেঁড়া আর না করতে পারে। প্রয়োজনে ভোটার তালিকা বিধিমালায় শক্ত ধারা যুক্ত করা। সেখানে, এনআইডির কার্যক্রমে যারা যুক্ত থাকবেন যদি কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে তাহলে তাকে চাকরি থেকে স্থায়ী বাদ দেওয়া সংক্রান্ত বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা।
২০২১ সালের ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এনআইডি সরিয়ে নেওয়ার জন্য মতামত দেওয়া হলে ২৪ মে ইসিকে এনআইডি ছেড়ে দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিতে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর নির্বাচন কমিশন যুক্তি তুলে ধরে এনআইডি নিজেদের কাছে রাখার পক্ষে মতামত তুলে ধরে চিঠি দেয়। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২০ জুন ইসিকে একটি চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, সরকার এনআইডি কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে একই বছর ২৩ জুন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এনআইডি অনুবিভাগ অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। কীভাবে নেবে না-নেবে, এ বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে। এটা তো টেবিল চেয়ার নয় যে, উঠিয়ে নিয়ে গেলাম। এনআইডি সেবা চলে গেলে আমাদের কার্যক্রমে অসুবিধা হবে।
"