নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ আগস্ট, ২০২৪

পালানোর পথ খুঁজছেন কৃষি সচিব

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দলঘেঁষা আমলাদের ফেলে গেছেন বিপদে। দেশ ছেড়ে প্রাণভয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন বহু নেতা-আমলা। আবার স্বল্প সময়ে অনেকে পালাতে না পেরে থেকে গেছেন দেশে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের আমলাদের মতো দেশ ছেড়ে পালানোর পথ খুঁজছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নিজ মন্ত্রণালয়ে সীমাহীন দুর্নীতির মহারানি ওয়াহিদা। গত কয়েক বছরে স্বামী-স্ত্রী মিলে কৃষি সেক্টরকে কবজায় নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অবৈধ উপায়ে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মেধাবী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জামায়াত-বিএনপির তকমা দিয়ে শাস্তিমূলক বদলি ও পদায়ন দিয়ে রেখেছেন এই সচিব।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়াহিদা আক্তারের জন্ম খুলনা জেলার দীঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী গ্রামে। শিক্ষা জীবনে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী। ছাত্রজীবন শেষে ১৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন ওয়াহিদা আক্তার। এক প্রতিমন্ত্রীর পিএস থেকে হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পিএস হিসেবে কাটান প্রায় চার বছর। সেখান থেকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ে। ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড থাকায় অতিরিক্ত সচিব থেকেও সচিবের পাওয়ারে ছিলেন ওয়াহিদা। সচিব পদে পদোন্নতির পর কৃষিতেই থেকে যান তিনি। চলতি বছরের মার্চ মাসে অবসরে যাওয়ার পর দলীয় কোটায় এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। কয়েক বছর ধরে কৃষি সেক্টরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এই আমলার। শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের খাতিরে দলীয় কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি বক্তৃতায় মন্ত্রী-এমপিদের ভাষায় রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন অধস্তন কর্মকর্তাদের। গত রবিবার চলমান আন্দোলনের মধ্যেই সরকারি কৃষিবিদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঠে নামান এই কর্মকর্তা। তার পিএস এবং তিনি নিজে খামারবাড়ী ও মানিকনগরে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের কথিত শান্তি সমাবেশে যোগ দেন।

সূত্র জানায়, শুধু তা-ই নয় স্বামী ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার সচিব পদ মর্যাদায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান। অনেক সিনিয়রকে ডিঙিয়ে বখতিয়ারকে চেয়ারম্যান বানান কৃষি সচিব মহারানি ওয়াহিদা। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সম্পর্কের সূত্র ধরে দুবার স্বামীকেও চুক্তিভিত্তিক রেখেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১৯টি অধিদপ্তর/সংস্থার পদগুলোতেও নিয়োগ হয়েছে দলীয় বিবেচনায়। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ আন্দোলনে শেখ হাসিনার পালানোর পর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না ওয়াহিদা আক্তার ও তার স্বামী শেখ বখতিয়ারকে।

কৃষি খাতের অনেকেই বলছেন তারাও পালিয়ে দেশ ছাড়তে পারেন। ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের পাশাপাশি ওয়াহিদা আক্তার শেখ হাসিনার উপদেষ্টা মশিউর রহমানে ভাগ্নি ছিলেন। আগামী নির্বাচনে খুলনা থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করারও পরিকল্পনা ছিল বলে তার ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি প্রকল্প অনুমোদনে ছিল তার হাত। অপ্রয়োজনীয় ও ব্যয়বহুল প্রকল্পের উপকারিতা দেখিয়ে পাস করিয়ে নিতেন তিনি। এরপর সেসব প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ গ্রহণ করতেন ওয়াহিদা। দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে কোনো কর্মকর্তা প্রতিবাদ করলেই কপালে জুটত শাস্তিমূলক বদলি। মন্ত্রণালয় এবং খামারবাড়ীর কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করে রাখতেন তিনি।

এ ছাড়া কৃষি সচিব হওয়ার পর ওয়াহিদা আক্তারের ঘন ঘন বিদেশ সফর করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন। নথি অনুযায়ী, গত বছর ওয়াহিদা আক্তার ১১টি দেশ সফর করেছেন, যার মধ্যে মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি গেছেন ছয়টি দেশে। যা বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে সরকারি নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন। ২০২৩ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ছয়বার এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মে পর্যন্ত পাঁচবার তিনি বিদেশ সফর করেছেন।

২০১১ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ‘বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি এবং অনুসরণীয় আনুষঙ্গিক বিষয়াদি’ শিরোনামে একটি সার্কুলার জারি করে, যেখানে বলা হয়েছে, একজন সচিব বছরে সর্বোচ্চ চারবার সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন।

কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি কোথায় পালাব? আমার যাওয়ার জায়গা নেই। আমার সামর্থ্য নেই। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় ছিল তাই বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপে রেখেছি। এখন সরকার ক্ষমতায় নেই। এখন কোন সরকার ক্ষমতায়? প্রতিবেদককে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

প্রকল্প পরিচালকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোথায় পান এসব গাঁজাখুরি গল্প? আমাকে প্রকল্প পিডিদের কাছ থেকে টাকা নিতে হবে কেন? আমার স্বামী টাকা কামাই করে না? আমার ছেলে টাকা কামাই করে না? যা পারেন লিখে দেন, সমস্যা নেই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close