নিজস্ব প্রতিবেদক
দাম কমেছে আলু-পেঁয়াজসহ সব সবজির, ডিম-মুরগির
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে গতকাল শুক্রবার সকালে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আতিক হাসান। দু-তিন দিন আগের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা কম পেয়ে স্বস্তির ছাপ দেখা গেল তার চোখে-মুখে। আতিক বলেন, মনে হচ্ছে সবজির দাম কমে আসতে শুরু করেছে। মাঝখানে কিছুদিন সবজির দাম এতটাই বেড়েছিল, বলতে গেলে ৮০ টাকার নিচে বাজারে কোনো সবজিই ছিল না। সেই তুলনায় আজকে বাজারে দেখা যাচ্ছে কিছুটা কম। যদিও কিছু কিছু সবজির দাম বাড়তি রয়ে গেছে।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৩ দিনের তুলনায় আলু-পেঁয়াজসহ সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। অধিকাংশ সবজি কেজিতে ১৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত টাকা কমেছে। মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ২০ টাকা। বিক্রেতাদের বরাবরের অভিযোগ ছিল, রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজির কারণে সবজির দাম অনেকটা বেড়ে যায়। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে গত কয়েকদিন ধরে কোথাও কোনো চাঁদাবাজি নেই। সে কারণে বাজারে আগের চেয়ে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। তাছাড়া বাজারে এখন সবজির সরবরাহও বেড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দাম বেশির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু কিছু সবজির এখন মৌসুম নেই, সে কারণে সেগুলোর দাম কিছুটা বেশি।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ থেকে ৫০, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৪০, পেঁপে ৪০, কচুরমুখী কেজি ৮০, মুলা ৫০, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০, লাল বেগুন ৬০, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুরলতি ৬০, ঝিঙা ৭০, ধুন্দুল ৮০, শসা ৮০, কাঁচামরিচ ২৮০ এবং আলু ৬০ টাকা। অন্যদিকে মৌসুম না হওয়ার কারণে যেসব সবজির দাম বাড়তি সেই তালিকায় আছে টমেটো প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ এবং করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দামের বিষয়ে রাজধানীর মগবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা আবদুর রহমান বলেন, আগের চেয়ে সবজির দাম কমেছে। আগে থেকেই সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছিল। তবে কয়েকদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, কারফিউ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি পরিবহন করা যাচ্ছিল না। সে সময় আরো বেড়ে গিয়েছিল সব ধরনের সবজির দাম। সেই তুলনায় কমে আসতে শুরু করেছে সবজির দাম। এছাড়া আরো একটি বড় কারণ হলো আগে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি হতো, দোকান বসলে টাকা দিতে হতো, পিকআপে করে সবজি আনার সময় ট্রাফিকসহ বিভিন্ন জায়গায় খরচ হতো। বর্তমানে সেই খরচটি নেই সে কারণে আগের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে আমরা সবজি বিক্রি করতে পারছি।
রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির বিষয়টি উল্লেখ করে কারওয়ানবাজারের শরিফুল ইসলাম নামে এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, একটি ট্রাক যেখান থেকে প্রথমে সবজি নিয়ে আসে, সেখান থেকে চাঁদা দেওয়া শুরু হতো, এরপর রাস্তায় রাস্তায় ট্রাফিকসহ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা নিতো। এরপর কারওয়ানবাজার ঢোকার পরে বিভিন্নভাবে আলাদা আলাদা জায়গায় টাকা দিতে হতো। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এসব মাল কেনার পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যেতে তাদেরও বিভিন্নভাবে চাঁদা দিতে হতো। এরপর যেখানে সবজির ভ্যান গাড়ি অথবা দোকান বসে সেসব জায়গায়ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিদিন রাস্তা খরচ, লাইনম্যান বাবদ টাকা নিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে কিছুদিন ধরে এসব কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না, কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজিও করছে না। ফলে সব ধরনের সবজির দাম আগের তুলনায় কমে আসতে শুরু করেছে।
কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা তালেমুল ইসলাম বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ দ্বিগুণ। এতদিন আন্দোলন চলার কারণে সবজির ট্রাক কম আসত। তার ওপর রাস্তায় চাঁদাবাজ নেই। তাই দাম কমেছে। তিনি আরো বলেন, যেই মানের বেগুন ৩ দিন আগে বিক্রি করেছি ১২০ টাকা সেটার কেজি এখন ৮০ টাকা। পটোল ছিল ৬০ টাকা এখন ৪০ টাকা। প্রতি কেজি সবজিতে সর্বনিম্ন ১৫ টাকা কমেছে। কারওয়ানবাজারের মুরগির দোকানগুলোয় দেখা গেছে, গত ৩ দিনের তুলনায় মুরগির দাম কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৯০ টাকা, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১৭০ টাকায়। কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটে দেখা যায় প্রায় ২৫ জনের শিক্ষার্থীদের একটি দল। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি না করতে অনুরোধ করেন।
এক শিক্ষার্থী আরিয়ান বলেন, আমরা সকাল ৯টা থেকে বাজার মনিটরিং করছি। ব্যবসায়ীদের আমরা দৃশ্যমান স্থানে মূল্যতালিকা টানাতে বলছি। তারা কী দামে পণ্য কিনেছেন, সেটাও দেখছি। অতিরিক্ত দাম জেন না রাখে সেটাও নজর রাখছি। কারওয়ানবাজারের শ্রীপুর ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা মোহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন, ৩ দিনের ব্যবধানে মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। আমরা ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা বিক্রি করছি। এখন বাজারে সরবরাহ ভালো। শিক্ষার্থীদের বাজার মনিটরিংকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বাজার করতে এসেছেন রেজাউল করিম নামের একজন। তিনি বলেন, ২ দিন আগে মুরগি কিনেছি ১৯০ টাকায়। আজকে কিনলাম ১৭০ টাকা। শিক্ষার্থীদের অনেক সুন্দরভাবে বাজার মনিটরিং করতে দেখলাম। তাদের অভিজ্ঞতা নেই এ কাজে তার পরও তারা ভালো করছে। সরকারের উচিত তাদের নিয়মিতভাবে মনিটরিং করতে দেওয়া।
কারওয়ানবাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা মোহাম্মদ লিটন বলেন, ১০০ ডিমে দাম কমেছে ২০০ টাকা। ৩ দিন আগে ছিল ১৩৫০ টাকা। আজকে ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ টাকায়। কারওয়ানবাজারে ১৫ জনের একটি টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, রাজধানীর বাজারে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রঙিন লাইট ব্যবহার করে ক্রেতাদের প্রতিনিয়ত ধোঁকা দিচ্ছেন। এসব রঙিন লাইটের আলোর ঝলকানিতে পণ্য দেখে তাজা ও ভালো মনে হয়। তবে ক্রেতা বাসায় গিয়ে দেখেন, বাজারে যেমন দেখেছেন, ঠিক তেমন নয়। তাই আমরা এমন লাইট খুলে স্বাভাবিক লাইট জ্বালাতে বলেছি।
"