নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ আগস্ট, ২০২৪

বিমানবন্দরে ড. ইউনূস

আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন কোনো হামলা হবে না

নতুনভাবে দেশকে গড়ে তুলতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, দেশবাসীর কাছে আহ্বান, আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন, ভরসা রাখুন, দেশে কারো ওপর কোনো হামলা হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

প্রতিক্রিয়ার শুরুতেই ড. ইউনূস বলেন, নতুন বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন বিজয় দিবস শুরু করল। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটি করেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, তারা (আন্দোলনকারী তরুণরা) দেশকে রক্ষা করেছে। দেশকে পুনর্জন্ম করেছে।

এ সময় রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ড. ইউনূস। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আজ আমার আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে, যে আবু সাঈদের কথা দেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। যে অবিশ্বাস্য সাহসী যুবক বুলেটের সামনে বুক পেতে দিল, যাকে দেখে অন্যরা সাহস ও শক্তি পেল- তা আমাদের জন্য অনুসরণীয়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এসেছে।

ড. ইউনূস আরো বলেন, এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের এই স্বাধীনতার অর্থ ব্যক্তির পরিবর্তন, সমাজের পরিবর্তন। এটা সবাইকে বুঝতে হবে ও করতে হবে।

বাংলাদেশকে আরো মজবুত করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশ পেলাম সে বাংলাদেশ যেন পূর্ণতা পায়। নতুন বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন বিজয় দিবস শুরু করল। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটি করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, তারা (সমন্বয়করা) দেশকে রক্ষা করেছে। দেশকে পুনর্জন্ম করেছে।

তরুণ সমাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ নতুন করে বিজয় পেল তা যেন পূর্ণতা পায়। তরুণ সমাজ যেন নিজেদের মতো করে দেশকে সাজাতে পারে। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস আবারও বলেন, এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি মানুষের কাছে এর সুফল পৌঁছে দিতে হবে। স্বাধীনতার অর্থ হলো, দেশ তোমাদের হাতে। তোমাদের মনের মতো করে গড়তে পারো। পাল্টে ফেলতে পারো। পুরোনোদের বাদ দাও। তোমাদের মধ্যে সৃজশীলতা আছে, তাকে কাজে লাগাও।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সরকার হয়ে উঠেছিল দমনপীড়নের একটি যন্ত্র- এটা সরকার হতে পারে না। সরকারকে দেখে মানুষ উৎফুল্ল হবে। যে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে। সারা বাংলাদেশ একটি পরিবার।

দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। সবাইকে রক্ষা করা আমাদের কাজ। প্রতিটা মানুষ আমাদের ভাই। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের প্রথম কাজ।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বঙ্গভবনে শপথ নিতে প্যারিস থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। তাকে স্বাগত জানাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এরপর তাকে স্বাগত জানান অন্য দুই বাহিনীর প্রধান। পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফুল দিয়ে বরণ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্তির পর মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর বুধবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আসুন আমরা আমাদের এই নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করি। কোনো ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র ও দলমত নির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close