ইসমাঈল সিরাজী
ঢাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করলেন ছাত্ররা
পূর্ব আকাশে আজকের সূর্যোদয় এক অন্যরকম অনুভূতির। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগে স্বাধীনতার নতুন সূর্যোদয় দেখেছে বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্ম। শপথ করছেন নতুন করে দেশটি সংস্কারের। গত ৫ আগস্ট রাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে স্বাভাবিক হতে থাকে রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় প্রতিটি জেলা শহর।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লে ও সিগন্যালগুলোতে জটলা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ অবস্থায় ট্রাকিক ব্যবস্থার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশবিহীন ঢাকা শহরের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করবে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এ বিষয়ে আনসার ভিডিপির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) রুবেল হোসেইন বলেন, আনসার সদস্যরা থানাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান করবে। পাশাপাশি ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বেও তাদের মোতায়েন করা হচ্ছে।
গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর বিজয়সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটরসহ ব্যস্ততম মোড়গুলোতে শিক্ষার্থীদের গাড়ি চলাচলে সিগন্যাল দিতে দেখা যায়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিটি মোড়ে কাজ করেছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। তাদের ইশারায় চলছে গাড়ি। ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও ঢাকার রাস্তায় ইউনিফরম পরা কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি।
ঢাকা পলিটেকনিকের রাশেদ শিক্ষার্থী নিজ দায়িত্বে এসেছেন ট্রাফিক পুলিশবিহীন রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম মোড় বিজয়সরণির যানজট নিরসনে। তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছিলাম সকালে এখানে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় এখানে বিশৃঙ্খলা দেওয়া দেয়। যার কারণে অফিসগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে তাই আমরা কয়েকজন মিলে এসেছি ট্রাফিক সিগন্যালের মধ্য দিয়ে যানজট নিরসন করতে। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এই কাজটি আমরা নিজ ইচ্ছায় করে যাচ্ছি।
কারওয়ান বাজার মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনাকারী ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিসান বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিলে আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোরে কাজ করছি। আমরা না দাঁড়ানোর আগে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। দেশটা আমাদের তাই দেশেই এই সময়ে আমরাই দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছি।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গাড়ির গ্লাস খুলে অনেকে শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান।
দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে শুধু ট্রাফিক ব্যবস্থাই নয় জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা ও সড়ক পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে পরে থাকা বিভিন্ন ময়লা, ইটসহ আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা গিয়েছে। যার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে জাতীয় সংসদ ঝাড়ু দেওয়া ছাত্রদের একটি ছবি ভাইরাল হয়। অনেকেই এই ছবি শেয়ার করে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ও পরবর্তীতে দেশে জন্য কাজ করার মনোভাব দেখে প্রশংসা করেন।
"